তামিমের ১৪ ওয়ানডে সেঞ্চুরির গল্প !!!

তামিমের ১৪ ওয়ানডে সেঞ্চুরির গল্প !!!

তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান, রান আর সেঞ্চুরি সংখ্যা তাই বলে। রান আর সেঞ্চুরি দুই দিকেই বাংলাদেশের এক নম্বর ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। চট্টলার এই ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে করেছেন ১৪ সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ রান সংখ্যার ক্রমে সেই ১৪ সেঞ্চুরি এক গল্পে।

ক্যারিয়ারে এক যুগ পার করেছেন। তামিমের ক্যারিয়ার সেরা রান ১৫৮। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২০২০ সালে তামিম ইকবাল করেছেন এই রান।

 

তামিমের ১৪ ওয়ানডে সেঞ্চুরির গল্প !!!

 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তিন নম্বর ম্যাচে তামিমের ব্যাট থেকে আসে ১৫৮ রান। তামিমের ১৫৮ রানের কল্যাণে বাংলাদেশ তোলে ৩২২ রান। বাংলাদেশের ইনিংসের প্রায় ৪৯.০৭ শতাংশ রান একাই করেন তামিম। টাইগাররা ম্যাচ জেতে চার রানে। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হোন বাংলাদেশের বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক।

তামিমের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা রান ১৫৪ রান করেন জিম্বাবুয়ের সাথে। ২০০৯ সালের ১৬ আস্ট জিম্বাবুয়ের সাথে চতুর্থ ওয়ানডে ম্যাচে ১৫৪ রান আসে তামিমের ব্যাট থেকে। রান তাড়ায় বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে চার উইকেটে। কুইন্স স্পোর্টস পার্কে তামিমের সাথে যৌথভাবে ম্যাচ সেরা হোন ১৯৪ রান করা চার্লস কভেন্ট্রি। কভেন্ট্রির করা ১৯৪ রান রান তখনকার সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে যৌথভাবে ইনিংসে সর্বোচ্চ রান।

১৭ এপ্রিল ২০১৫ তে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে আসে ১৩২ রান। তামিমের এই ইনিংসে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারায় ১৬ বছর পরে। মিরপুরে তামিমের ১৩২ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ ৫০ ওভারে তোলে ৩২৯ রান। তামিমের পাশাপাশি সেঞ্চুরি করেন মুশফিকুর রহিমও। মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে দিবারাত্রির ম্যাচে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারায় ৭৯ রানে। তবে ৭৭ বলে ১০৬ রান করে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হোন মুশফিকুর রহিম।

২০১৮ সালের জুলাই, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে। গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে তামিম করেন ১৩০ রান। দলের প্রায় ৪৬ শতাংশ রান একাই করেন চট্টগ্রামের এই ব্যাটসম্যান। তামিমের ১৩০ রানে ভর করে বাংলাদেশ তোলে ২৭৯ রান। জবাবে ২৩১ রানে থামা উইন্ডিজ ম্যাচ হারে ৪৮ রানে। ১৩০ রানের ইনিংসের সুবাধে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হোন তামিম ইকবাল।

বিপিএল ২০২২এ সেঞ্চুরির পর তামিম ইকবাল, বাংলাদেশী ক্রিকেটার [ Tamim Iqbal, Bangladeshi Cricketer ]
বিপিএল ২০২২এ সেঞ্চুরির পর তামিম ইকবাল, বাংলাদেশী ক্রিকেটার [ Tamim Iqbal, Bangladeshi Cricketer ]

মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের সাথে তৃতীয় ওয়ানডে। আইরিশ বোলারদের বিপক্ষে তামিম খেলেন ১২৯ রানের ইনিংস। ২০০৮ সালের মার্চে খেলা তামিমের এই ইনিংসের কল্যাণে বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে ৭৯ রানে। ম্যাচের ৪৪ শতাংশ রান একাই করেন তামিম-ইকবাল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৯ রান করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের ২৯৩ রানের জবাবে সফরকারী আয়ারল্যান্ড থামে ২১৪ রানে। এটি ছিলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিমের প্রথম সেঞ্চুরি।

লন্ডনের কেনিংটন ওভালে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। বড় মঞ্চ পেয়ে জ্বলে উঠলেন তামিম-ইকবাল। পহেলা জুন ২০১৭, ইংল্যান্ডের সাথে তামিম-ইকবাল খেললেন ১২৮ রানের ইনিংস। বাংলাদেশ দল ৬ উইকেটে তোলে ৩০৫ রান। যদিও ম্যাচটা বাংলাদেশ হারে ৮ উইকেটে। অপরাজিত ১৩৩ করে ইংল্যান্ডকে জিতিয়ে ম্যাচ সেরা নির্বাচত হোন জো রুট। ওয়ানডে ক্রিকেটে তামিম-ইকবালের আরেকটি ১২৮ রানের ইনিংস রয়েছে। তবে সেবার দলও জিতেছে। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ম্যাচ জিম্বাবুয়ের সাথে।

২০২০ সালের মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তামিম-ইকবাল খেলেন ১২৮ রানের ইনিংস। বাংলাদেশ দল তোলে ৩২২ রান। বাংলাদেশ ডিএল ম্যাথডে জেতে ১২৩ রানে। এই ম্যাচে লিটন দাসের ব্যাট থেকে আসে ১৭৬ রান। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হোন এই ব্যাটসম্যান।

২০১৭ সালের মার্চে তামিম-ইকবাল শ্রীলঙ্কার সাথে করেন ১২৭ রান। তামিমের-ইনিংসের ওপর ভর করে বাংলাদেশ দল তোলে ৩২৪ রান। তামিমের-ইনিংসে ছিল ১৫ চার আর এক ছয়। রান তাড়া করতে নেমে ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কা ম্যাচ হারে ৯০ রানে। সেঞ্চুরিতে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হোন তামিম-ইকবাল।

২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। মিরপুরের শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তামিমের ব্যাট থেকে আসে ১২০ বলে ১২৫ রানের ইনিংস। ১৩ চার আর তিন ছয়ে সাজানো ছিল তামিমের-ইনিংস।

দলের ৫৪ শতাংশ রান একাই করেন তামিম। বাংলাদেশ দল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে তোলে ২২৮ রান। ইংলিশরা ম্যাচ জেতে ৬ উইকেটে। যদিও সেঞ্চুরিতে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হোন তামিম-ইকবাল।

তামিমের আরেকটি সেঞ্চুরি এসেছে পয়েলা অক্টোবর, ২০১৬ তে। মিরপুরের শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দিবারাত্রির ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান।

 

চট্টগ্রামই দেশের টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের আদর্শ ভেন্যু ?
তামিম ইকবাল

 

আগে ব্যাট করা বাংলাদেশের পক্ষে তামিম খেলেন ১০০ স্ট্রাইকরেটে ১১৮ বলে ১১৮ রানের ইনিংস। তামিমের ইনিংসে ছিল ১১ চার আর দুটো ছয়। বাংলাদেশ দল বোর্ডে তোলে ৮ উইকেটে ২৭৯ রান। জবাব দিতে নেমে আফগানরা ম্যাচ হারে ১৪১ রানের ব্যবধানে। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হোন তামিম-ইকবাল।

পাকিস্তানের সাথে মিরপুরের শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দিবারাত্রির দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ। ২০১৫ সালে তামিম ইকবাল এই সেঞ্চুরি করেন রান তাড়ায়। তামিম খেলেন ১০০ স্ট্রাইকরেটে ১১৬ বলে ১১৬ রানের ইনিংস। ম্যাচ সেরা তামিম। এই ওপেনারের ব্যাটে ভর দিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে ৭ উইকেটে। তামিম ছাড়াও রান তাড়ায় এই ম্যাচে ফিফটি করেন মুশফিকুর রহিম। প্রথম বার বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ নেয় এই ম্যাচ জয়ের মাধ্যমে।

সেঞ্চুরির ম্যাচে তামিমের রান আউট। ২০১৩ সালে রান আউটে আগে তামিমের ব্যাট থেকে আসে ১১২ রান। হাম্বানটোটায় বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার সাথে প্রথম ওয়ানডে। তামিমের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ দল তোলে ২৫৯ রান। যদিও স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ম্যাচ জেতে আট উইকেটে।

তামিম ইকবালের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ছিল আরো একটি ১১২ রানের ইনিংস। তবে সেটি রান তাড়ায় আর ম্যাচটি জিতেছিল বাংলাদেশ। ২০২১ সালের জুলাইয়ে হারারে স্পোর্টস ক্লাবে বাংলাদেশের ম্যাচ জিম্বাবুয়ের সাথে।

জিম্বাবুয়ের করা ২৯৮ রানের জবাবে তামিম ৯৭ বলে করেন ১১২ রান। বাংলাদেশ দল ম্যাচ জিতে ৫ উইকেট আর ১২ বল হাতে রেখে। ম্যাচ সেরা হোন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।

তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি পেরিয়ে সবচেয়ে কম রানে আউট হওয়ার ইনিংস ১০৩ রানের। ২০১৮ সালে উইন্ডিজের সাথে ওয়ার্নার পার্কে তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে তামিমের ব্যাট থেকে আসে ১০৩ রান। ৩০১ রান তোলা বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে ১৮ রানে।

সেঞ্চুরি ছাড়াও ওয়ানডে ক্রিকেটে তামিমের ৯৫ রানের ইনিংস রয়েছে তিনটে। এছাড়া ৮০ পেরোনো ইনিংস সাতটি। এই দশ ইনিংস থেকে কিছু সংখ্যক ইনিংস তামিম যদি সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারতেন। তবে এই ওপেনারের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেঞ্চুরি সংখ্যা হতো আরো বেশি। তবুও ১৪ সেঞ্চুরি, তামিম তৃপ্ত হতেই পারেন। তাই নয় কী!

 

আফগানদের বিপক্ষে কেমন হবে একাদশ? ৩ নম্বরে ব্যাট করবেন কে?
তামিম ইকবাল

 

(লেখকঃ ইশতিয়াক শাওন, ক্রিকেট গুরুকুল)

তামিমের ১৪ ওয়ানডে সেঞ্চুরির গল্প !!!

 

আরও পড়ুন:

Leave a Comment