ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি [ ২৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৮ ] হ্যারিস শিল্ড ট্রফি তে সেইন্ট জেভিয়ার্স হাই স্কুলের হয়ে শ্রদ্ধাশ্রম বিদ্যামন্দির ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বিপক্ষে দুই বন্ধু শচীন রমেশ টেন্ডুলকার এবং বিনোদ কাম্বলি গড়েন ৬৬৪* রানের অবিশ্বাস্য এক জুটি৷ শচীন করেন ৩২৬* রান আর বিনোদ কাম্বলি করেন ৩৪৯* রান। যেটি এখন পর্যন্ত যে কোনো ধরণের ক্রিকেটে, যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি।
২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১০: গোয়ালিয়রে সিরিজের ২য় ওডিআইতে মুখোমুখি হয় ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। টস জিতে ব্যাটিং এর সিদ্ধান্ত নেন ভারত। দুই ওপেনার বীরেন্দর শেওয়াগ এবং শচীন টেন্ডুলকারের ওপেনিং জুটি ভাঙে ২৫ রানে। শেওয়াগ আউট হলেও স শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙিতে খেলতে থাকেন মাস্টার ব্লাস্টার শচীন রমেশ টেন্ডুলকার।
মাত্র ৩৭ বলে তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। এরপর কিছুটা ঠান্ডা মাথায় ব্যাটিং শুরু করেন। তবে ব্যাটে বলে সমান তালে রান তুলেন। পরবর্তী ৫০ স্পর্শ করেন ৫৩ বলে। তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করতে তাকে খেলতে হয় ৯০ বল। ওডিআই ক্রিকেটের হিসেবে ধ্রুপদী এক ইনিংস। এর সাথে ভারতের দলীয় সংগ্রহ ২০০ স্পর্শ করে মাত্র ৩১ ওভারে।
সেঞ্চুরি পর আরো মারকুটে হন শচীন। বোলারদের উপর ছড়ি ঘুরাতে শুরু করেন। মাত্র ২৮ বলে তুলেন নেন পরের অর্ধশতক। ১৫০* স্পর্শ কঅরতে বল খেলেন ১১৮ টি। ৩১ ওভারে ২০০ সংগ্রহ করা ভারতের ৪১ ওভারে রান দাঁড়ায় ৩০০ তে।
দেড় শতাধিক রান স্পর্শ করার পরও যথারীতি একই স্টাইলে ব্যাটিং তাণ্ডব চালাতে থাকেন শচীন। পরের উনপঞ্চাশ তুলে নেন মাত্র ২৮ বলে। এরপরের বলে চার্ল লাঙ্গাভেল্টের বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্পর্শ করেন ২০০ রানের মাইলফলক।
প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন। ২৫ চার আর ৩ ছক্কায় ১৪৭ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। এটি শুধু শচীনের ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবলই নয়, তখন পর্যন্ত খেলা ২৯৬২ টি ওডিআই আর ৩৯ বছরের ওডিআই ইতিহাসের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি।
ওডিআইতে সাঈদ আনোয়ার ১৯৪ আর চার্লস কভেন্ট্রির করা ১৯৪* ব্যক্তিগত রানের ইনিংসের রেকর্ড ভেঙ্গে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড নিজের করে নেন। যদিও সেটি শেওয়াগের (২১৯) হাতে চলে যেতে সময় নেয় মাত্র দেড় বছরের থেকে একটু বেশী।
২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৩: চেন্নাই তে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের ১৩০ রানে ভর করে অজিরা সংগ্রহ করে ৩৮০ রান। জবাবে ভারত এর স্কোর কার্ডে উঠে ৫৭২ রান। এর মাঝে অধিনায়ক ধোনির রান ২২৪। জেমস প্যাটিনসনে বলে উইকেটরক্ষক ম্যাথু ওয়েডের তালুবন্দী হওয়ার আগে ২৪ চার, ৬ ছক্কায় তিনি এই রান সংগ্রহ করেন। ২২৪ রান তুলতে তাকে বল খেলতে হয়েছে মাত্র ২৬৫ টি, যেখানে স্ট্রাইক রেট নজরকাড়া ৮৪.৫২। এটিই ধোনির টেস্ট ক্যারিয়ারের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি। ভারতীয় কোনো উইকেট রক্ষকের এক মাত্র ডাবল সেঞ্চুরিও এটিও৷ ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী এই কীর্তি গড়েন ধোনি।
২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৫: বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং জিম্বাবুয়ে। টস জিতে ব্যাটিং এর সিদ্ধান্ত নেন ক্যারিবিয়ান দলপতি জেসন হোল্ডার। ইনিংসের প্রথম বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ওপেনার ডোয়াইন স্মিথ। তবে আরেক ওপেনার ক্রিস গেইল প্রথম থেকেই স্ট্রাইক রোটেট করে ব্যাটিং চালিয়ে যান গেইল। ৫১ বলে তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি।
এরপর কিছুটা ঠান্ডা মাথায় ব্যাটিং করে, ব্যাটে বলে সমান তালে রান তুলতে থাকেন। পরের ৫৪ বলে স্পর্শ করেন পরবর্তী ৫০। অর্থাৎ তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করতে তাকে খেলতে হয় ১০৫ বল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৭ ওভারে তোলে মাত্র ১৭৭ রান। অন্য প্রান্তে ম্যারলন স্যামুয়েলস যেনো তালই মেলাতে পারছিলেন না গেইলের সাথে।
তবে সেঞ্চুরি পর যেন ভয়ংকর রূপ ধরেন গেইল। বোলারদের উপর ছড়ি ঘুরাতে শুরু করেন। মাত্র ২১ বলে পরের ৫০ তুলে নেন। অর্থাৎ দেড়শো রান স্পর্শ করতে খেলতে হয়েছে ১২৬ বল। দেড় শতাধিক রান স্পর্শ করার পর যথারীতি ক্ষিপ্র থেকে ক্ষিপ্রতর হয়ে উঠে ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল। পরের অর্ধশতক তুলে নেন মাত্র ১২ বলে। অর্থাৎ ১৩৮ বলে তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ১০ চার আর ১৬ ছক্কায় ১৪৭ বলে ২১৫* রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন গেইল।
সে ইনিংসে তার হাঁকানো ১৬ ছক্কা ৫০ ওভারের ক্রিকেটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডে যা এবিডি ভিলিয়ার্স এবং এবং রোহিম শার্মার সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ছিলো। পরবর্তীতে ২০১৯ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইংলিশ কাপ্তান ইয়ন মরগ্যান ১৭ ছক্কা হাঁকিয়ে সে রেকর্ড নিজের করে নেন। গেইলের হাঁকানো সেই ডাবল-সেঞ্চুরি ৪৪ বছরের ওডিআই ইতিহাসের পঞ্চম ডাবল-সেঞ্চুরি। সব চাইতে বড় ব্যাপার হচ্ছে ১১তম বিশ্বকাপে এসে এটি বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ডাবল-সেঞ্চুরি।
কিন্তু, আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে তার এই রেকর্ড মাত্র ২৫ দিন তার দখলে ছিলো। তার দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই মার্টিন গাপটিল ২৩৭* রানের এক ইনিংস খেলে রের্কড নিজের করে নেন। এই রেকর্ড দিয়ে গেইল ঢুকে যান এমন একটি এলিট ক্লাবে যার সদস্য শুধুই তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে ট্রিপল, ওয়ানডেতে ডাবল এবং টি টুয়েন্টিতে শতক হাঁকানোর বিরল রেকর্ড গড়েন এই ব্যাটিং দানব।
ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দিন ২৪ ফেব্রুয়ারীতে আরো দুটি ঐতিহাসিক ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড হয়েছে।
২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০, মিরপুরে সিরিজের একমাত্র টেস্টে মুখোমুখি বাংলাদেশ এবং জিম্বাবুয়ে। প্রথম ইনিংস পেসার আবু জায়েদ রাহি এবং স্পিনার নাঈম হাসান এর কল্যানে ২৬৫ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। ব্যাট হাতে জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের ভালো অবস্থানে নিয়ে যান ওপেনার তামিম ইকবাল এবং আরেক টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত৷ তামিমের ৪১ আর শান্ত’র ৭১ এর পর অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভের ১৩২ রান বাংলাদেশকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যায়। তবে এর পাশাপাশি আরেক প্রান্তে রান তুলতে থাকেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিকুর রহিম।
১৬০ বলে তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ৭ম সেঞ্চুরি। অধিনায়ক মুমিনুল হক আউট হওয়ার সময় ১২৭ রানে অপরাজিত ছিলেন অপর প্রান্তে৷ তবে এরপর যোগ্য সঙ্গ দিয়েছিলেন উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস৷ মুশফিকের ১৮৯* রানে লিটন অর্ধ শতক হাঁকিয়ে আউট হয়ে গেলেও তাইজুলকে সাথে নিয়ে ২০০ এর ল্যান্ড মার্ক স্পর্শ করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে স্পর্শ করেন তিনটি ডাবল-সেঞ্চুরির অন্যান্য কীর্তি। যেখানে অন্য কোনো ব্যাটসম্যানে নেই একাধিক ডাবল-সেঞ্চুরি। দেশের ক্রিকেটে ডাবল-সেঞ্চুরির সংখ্যা যেখানে ৫ টি, যার ৩ টিই মুশফিকুর রহিমের।
এর আগের দুটি ডাবল-সেঞ্চুরি করার ম্যাচ গুলোতে মুশফিক ছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। দেড়শো বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে উইকেট রক্ষক হিসেবে দুটি ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি একমাত্র মুশফিকুর রহিম এর।
সর্বশেষ এই ডাবল-সেঞ্চুরির ইনিংসটিতে উইকেট রক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন লিটন কুমার দাস। তাই এটি আর উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে গননা করা হবে না তবে প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে ৩ ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তির দিনক্ষণ টা মিলে গেলো শচীন – গেইলদের রেকর্ড এর ডাবল-সেঞ্চুরির রেকর্ড এর সাথে।
(লেখকঃ ইশতিয়াক শাওন, ক্রিকেট গুরুকুল)
আরও দেখুন:
- ক্রিকেট গুরুকুলের আপডেট
- বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড : উইকিপিডিয়া