অবসান ঘটলো সাকিব এবং বিসিবি-নাটকের?
সাকিব আল হাসান, মাঠের ভেতরের ক্রিকেটে যেমন অনেক সময়ই খবরের পাতার প্রধান শিরোনাম ঠিক তেমনি মাঠের বাহিরের ক্রিকেটেও অনেক সময়ই হয়ে থাকেন প্রধান আলোচনার বিষয়। এবারও হয়েছে তাই , হঠাৎ দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দল ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ না খেলার সিদ্ধান্ত নেন সাকিব। তবে, দুবাই থেকে ফিরে আবারো দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে খেলার ইচ্ছা পোষ্ণ করেছেন সাকিব আল হাসান। রবিবার রাতে, দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশ্যে উড়াল দেবেন তিনি।
গত ৬ই মার্চ, ব্যক্তিগত কাজে দুবাইয়ের উদ্দ্যেশে যাত্রা শুরুর আগে বিমানবন্দরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশের হয়ে না খেলার সিদ্ধান্ত জানান গণমাধ্যমকে।
সাকিব বলেন,
“আমি মানসিক দিক থেকে আর শারীরিক দিক থেকে যেই অবস্থায় আছি আমার মনে হয় না আমার এই মুহুর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সম্ভব ।আমার কাছে মনে হয় যে, আমি যদি একটা ব্রেক পাই, আবার যদি ঐ আগ্রহটা ফিরে পাই তাহলে আমার জন্য খেলাটা সহজ হবে। আফগানিস্তান সিরিজে আমার কাছে মনে হয়েছে আমি একজন প্যাসেঞ্জার , যেমনটা আমি কখনোই চাই না। খেলাটা একদম উপভোগ করতে পারিনি; ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি। আমার কাছে মনে হয় না এরকম মন মানসিকতা নিয়ে সাউথ আফ্রিকায় সিরিজ খেলাটা আমার ঠিক হবে।আমার পার্সোনাল দিক থেকে চিন্তা করলে অবশ্যই হতাশাজনক। আমার নিজের প্রতিও নিজের এক্সপেক্টেশন কিংবা মানুষ যেভাবে আশা করে, বিসিবি যেভাবে আশা করে অবশ্যই সেভাবে করতে পারিনি। আমি নিজেও ভীষণ হতাশ।”
সাকিবের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে একটি প্রেস কনফারেন্সে রাগান্বিত কন্ঠে বিসিবি সভাপতি বেশকিছু উক্তি করেন। আইপিএলে দল পেলে সাকিব উপভোগ করতেন নাকি এমন প্রশ্নও ছুঁড়ে দেন বিসিবি সভাপতি।
এ প্রসঙ্গে পাপন বলেন, “সাকিব যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্তই থাকবে, তাহলে আইপিএল খেলতে চেয়েছে কেন? ফিটনেস ও মানসিকভাবে ফিট না থাকলে তো আর আইপিএল খেলার ইচ্ছে পোষণের কথা না। যুক্তিতে তো তাই আসে।
আমরা মোটেও বিচলিত নই। ও (সাকিব) হয়তো মানসিক ও শারীরিকভাবে ডিস্টার্ব।সাকিবের যদি সমস্যা হয় আমাদের জানাতে পারে। বিমানবন্দরে এভাবে মিডিয়ার কাছে বলে দেওয়া কেন? ও তো দিনের বেলায় আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতো। কোচের সঙ্গে কথা বলতে পারতো। টিম ডিরেক্টর সুজনের সঙ্গে কথা বলতে পারতো। হঠাৎ এভাবে চমক দেওয়া কেন করছে। আমাদের অনেকে এটা পছন্দ করেনি।’’
এরপরে, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরণের ক্রিকেট থেকে সাকিবকে বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নেয় বিসিবি। ১ দিন আগেই, ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্রিকেটারদের জন্য কেন্দ্রীয় চুক্তি ঘোষণা করে বিসিবি। এ চুক্তিতে, ২১ জন ক্রিকেটারের মধ্যে সব ফরমেট খেলবে এমন ৫ ক্রিকেটারের নামও ঘোষণা করে বিসিবি। সব ফরমেট খেলা ৫ ক্রিকেটারের মধ্যে সাকিব আল হাসানকেও চুক্তির আওতায় আনে বিসিবি।
[ অবসান ঘটলো সাকিব এবং বিসিবি নাটকের? ]
তবে আজ বিসিবি বসের সাথে আবারো আলোচনায় বসেন সাকিব। আলোচনা শেষে গণমাধ্যমকে সাকিব বলেন,” পাপন ভাইয়ের (নাজমুল হাসান) সঙ্গে পরশু রাতেও কথা হয়েছে, আজও ওনার সঙ্গে কথা হয়েছে। যেহেতু তিন সংস্করণেই আছি, তিন সংস্করণেই সব সময় দল ডাকলে খেলার জন্য প্রস্তুত থাকব। বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে, কখন বিশ্রাম দেওয়া দরকার। দক্ষিণ-আফ্রিকা সফরেও আমি অ্যাভেইলেবল।”
সাকিবের কথার উপর ভিত্তি করে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, “পরশুদিন দুবাই থেকে এসেই বাসায় এসেছিল। ওকে সময় দেয়া হয়েছিল। গতকালকেও কথা হয়েছে, আজকেও বোর্ডে বসলাম। সিনিয়রদের জন্য টানা খেলাটা কঠিন। চুক্তির ব্যাপারেই সাকিবের সাথে আলাপ হয়েছে।
আমার সঙ্গে ওর লম্বা আলোচনা হয়েছে। ও জানিয়েছে, ও সব সংস্করণে খেলতে ইচ্ছুক দক্ষিণ-আফ্রিকা সফর থেকেই। এটা আমাকে পরশু বলেছে। তারপর বলেছি, তুমি বিশ্রাম নাও আজ। ঠান্ডা মাথায় ভাবো। ভেবে আমাকে জানাও। কাল আমাকে ফোন করে জানিয়েছে, “আমি আসলেই খেলতে চাই।” আমি তারপরও তাকে সময় দিলাম। বললাম, কাল বোর্ডে আসো। আজ বোর্ডে সবাই মিলে বসেছিলাম।”
পাপন আরো বলেন “গতকাল ফোন করে সাকিব আমাকে বলেছে আমি সাউথ আফ্রিকায় খেলতে চাই। অনেকেই অনেক সময় খেলতে নাই চাইতে পারে। এটাকে স্বাভাবিকভাবেই নেয়া উচিত। এই সময়টাতে আমাদের উচিত সাকিবকে সাপোর্ট করে যাওয়া। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে সাকিব-তামিমরা দেশের জন্য অনেক করেছে। ওদের খারাপ সময়ে আমাদেরও ওদের পাশে থাকা উচিৎ।”
এতো টানাপোড়ণের পর অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেলার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন সাকিব আল হাসান। দক্ষিণ-আফ্রিকা সিরিজে খেলবেন কিনা এ নিয়ে অনেক জল ঘোলা হলেও শেষমেশ, দক্ষিণ-আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন সাকিব। তবুও, প্রসঙ্গটা সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বলে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, “অবসান ঘটলো সাকিব এবং বিসিবি-নাটকের?”
আরও দেখুন: