উমরান মালিকের ফাস্ট বোলিংয়ের রহস্য! : হ্যা, বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে যিনি তার ফাস্ট বোলিংয়ের মাধ্যমে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন তিনি হলেন উমরান মালিক [ Umran Malik ]। নিজের পেসের কারণে চলমান আইপিএলে রীতিমত নাকানি চুবানি দিচ্ছেন প্রতিপক্ষের বাঘা বাঘা ব্যাটারদের। উমরানের দুর্দান্ত গতির কারণে চলমান আইপিএলে এক ত্রাসের নাম হয়েছেন তিনি। অনেকে উমরানকে ভারতীয় দলের ভবিষ্যৎ পেস বোলিং সুপারস্টার হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন।
[ উমরান মালিকের ফাস্ট বোলিংয়ের রহস্য! ]
এখন অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতেই পারে , যে উমরান মালিক কিভাবে এতো পেস জেনারেট করতে পারেন। উমরান মালিকের বিষয়টি সম্পূর্ণ ন্যাচারাল। শুরুর দিকে তার তেমন কোনো গুরু কিংবা কোচও ছিলো না , যার মাধ্যমে উমরান মালিক বোলিংয়ের হাতে খড়ি নিতে পারতেন। মূলত, কাশমির অঞ্চলে যারা থাকেন তাদের শরীরের নিচের অংশ অনেকটা স্ট্রং হয় বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষদের তুলনায়।

বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের খেলোয়াড়েরা অনেক বেশী জিম ওয়ার্ক করে নিজের শরীরের নিচের অংশ স্ট্রং করে। কিন্তু, কাশ্মীর অঞ্চলের মানুষদের প্রাকৃতিকভাবেই শরীরের নিচের অংশ শক্তিশালী থাকে। এ কারণেই, তারা অনেক বেশী শক্তিশালী হয়ে থাকেন এবং পেস জেনারেট করতে পারেন।
উমরান মালিকের সব থেকে ইউনিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার ব্যাকফুট ল্যান্ডিং। একজন পেস বোলারের জন্য তার ব্যাকফুট ল্যান্ডিংটা সবথেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। বোলিং রান আপ করার সময় একজন পেস বোলার যে লিনিয়ার মোমেন্টাম জেনারেট করতে পারেন, এটাকে অ্যাঙ্গুলার মোমেন্টামে কনভার্ট করার জন্য ব্যাকফুট ল্যান্ডিং স্মুথ হওয়া খুব জরুরী।

ক্রিকেটীয় ভাষায়, এ ব্যাকফুট ল্যান্ডিং ৩ প্রকার। এক ধরনের ব্যাক ফুট ল্যান্ডিং আছে, যেটিকে বলা হয় ফ্রন্ট অন ব্যাকফুট ল্যান্ডিং। এ ফ্রন্ট অন ব্যাকফুট ল্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে বোলারের ব্যাকফুটটা একদম স্ট্রেট কিংবা সোজা থাকে। ইংলিশ বোলার মার্ক উডের ব্যাক ফুট ল্যান্ডিং ঠিক এমনই। এ কারণেই, আমরা মার্ক উডকে বেশ দ্রুতগতিতে বোলিং করতে দেখি।
আরেক প্রকার ব্যাকফুট ল্যান্ডিং আছে যেটিকে বলা হয় মিডওয়েই ব্যাকফুট ল্যান্ডিং। এ ক্ষেত্রে বোলারের ব্যাকফুট খুব বেশী স্ট্রেইট কিংবা খুব বেশী প্যারালালও থাকে না অর্থাৎ মিড উইকেটের দিকে ঘেঁষা থাকে। ব্যাকফুট থাকে স্ট্রেইট এবং প্যারালালের মাঝামাঝি অবস্থানে।
আরেক প্রকার ব্যাকফুট ল্যান্ডিং হচ্ছে, সাইড অন ব্যাকফুট ল্যান্ডিং। এ ব্যাকফুট ল্যান্ডিং অনেক পেস বোলারের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। এ সাইড অন ব্যাকফুট ল্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাকফুট উইকেটের সাথে একেবারে প্যারালাল আকারে থাকে। অস্ট্রেলিয়ান বোলিং কিংবদন্তী ব্রেট লির ব্যাক ফুট ল্যান্ডিং ছিলো সাইড অন।

কিন্তু, এ তিন প্রকার ব্যাকফুট ল্যান্ডিংয়ের মধ্যে কোনো প্রকারই উমরান মালিকের ব্যাকফুট ল্যান্ডিংয়ের সাথে মিলে না। উমরান মালিকের ব্যাকফুট ল্যান্ডিং হলেও, তার ব্যাক ব্যাক ফুট মূলত মিড অন বরাবার কার্ভ করে থাকে। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, জেফ থম্পসন এবং শন টেইটের মতো বোলারদের ছিলো এমন ব্যাকফুট ল্যান্ডিং।
একজন পেস বোলারের বোলিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তার রান আপ। এ রান আপের মাধ্যমেই একজন পেস বোলার লিনিয়ার মোমেন্টাম জেনারেট করতে পারে। উমরানের এই রান আপটা অনেক দ্রুতগতির। এই দ্রুতগতির রান আপই উমরানকে অনেক বেশী সুবিধা দেয়, দ্রুত গতিতে বোলিং করার ক্ষেত্রে।

ফাস্ট বোলিংয়ের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হচ্ছে ফ্রন্ট নি তথা সামনের হাটুর অবস্থান। বোলিং করার সময় উমরানের এ ফ্রন্ট নি অনেক বেশী স্ট্রেইট থাকে। একজন বোলারের এ ফ্রন্ট ফুট ল্যান্ডিং যতোবেশী স্ট্রেইট হয় তার অ্যাকুরেসি ততোবেশী থাকে।

উমরান মালিকের বোলিংয়ের ক্ষেত্রে আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার কনুইয়ের হাইপার এক্সটেনশন। এ কনুইয়ের হাইপার এক্সটেনশন তাকে অনেক বেশী সাহায্য করছে। এছাড়াও, তিনি বোলিংয়ের সময় তার ফলো থ্রু একদম ফ্রন্ট অন থাকে। এটিও উমরানকে অনেক বেশী সাহায্য করছে।
এবারের আইপিএল মৌসুমে এখন পর্যন্ত সবথেকে দ্রুততম বোলার তিনি। গত বছর, কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে অভিষেক হয় তার। সে ম্যাচে, কোনো উইকেট না পেলেও ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ২৭ রান দিয়েছিলেন তিনি। এরপর, ২০২১ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন একজন নেট বোলার হিসবে। এখন পর্যন্ত, নিজের আইপিএল ক্যারিয়ারে ১২ ম্যাচে ২২.৫৩ গড়ে ১৭ উইকেট নিয়েছেন উমরান।
কিছুদিন আগেই এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, যে তাঁর লক্ষ্য ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার গতিতে বল করা। সেই লক্ষ্য এখন পর্যন্ত পূরণ না হলেও চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে গত ম্যাচে এবারের আইপিএলের দ্রুততম বলটি করে ফেললেন জম্মু কাশ্মীরের এই তরুণ পেসার। ১৫৪ কিলোমিটার গতিতে বল করলেন তিনি। সে ম্যাচে মোট দুইবার এই গতিতে বল করেছেন উমরান।
আরও পড়ুন: