মোস্তাফিজ, মিরপুরে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বোলার !!
মোস্তাফিজুর রহমান, বর্তমানে বাংলাদেশের পেস বোলিং লাইন আপের সবচেয়ে ভরসাযোগ্য এক নাম। ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানের বিপক্ষে টি টোয়েন্টি ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোস্তাফিজের অভিষেক হলেও, মোস্তাফিজ পুরোপুরি রূপে নিজের জাত চিনিয়েছেন একই বছরে ভারতের বিপক্ষে নিজের ওয়ানডে অভিষেকের মাধ্যমে। নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মোস্তাফিজ অধিক ধারালো হলেও, পরবর্তীতে ইঞ্জুরির কারণে মোস্তাফিজের বোলিংয়ের ধারালোভাব কিছুটা কমেছে।

তবুও, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সেরা পেস বোলার তিনি। মোস্তাফিজুর রহমানকে বিশ্বের সকল বিশ্বের সেরা বোলারদের মধ্যে একজন ধরা হলেও , মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিনি বিশ্বের অন্য সকল ভেন্যু থেকে একটু বেশিই ভয়ানক।
মোস্তাফিজের ওয়ানডে অভিষেক হয় ২০১৫ সালের ১৮ জুন, ভারতের বিপক্ষে। মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সে ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে ভারতকে ৩০৮ রানের টার্গেট দেয়। ৩০৮ রানের লক্ষ্য চেজ করতে নেমে শুরুটা বেশ ভালো হয় ভারতের। ভারতের স্কোর যখন ২ উইকেটের বিনিময়ে ১০৫ রান, ঠিক তখনই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করার আগে সেট ব্যাটার রোহিত শর্মাকে আউট করে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখেন মোস্তাফিজুর রহমান।

এরপর, এক এক করে আজিঙ্কিয়া রাহানে, সুরেশ রায়না এবং রবীন্দ্র জাদেজার মতো ব্যাটারদের আউট করে অভিষেক ওয়ানডেতেই ৫ উইকেট শিকার করেন মোস্তাফিজুর রহমান। সিরিজের পরের ম্যাচেও মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিং তান্ডবে দ্বিতীয় ম্যাচেও বাংলাদেশ জয়লাভ করে। সেবারই, প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। মোস্তাফিজুর রহমান সে সিরিজে সর্বমোট ১৩টি উইকেট লাভ করে সিরিজ সেরা নির্বাচিত হন এবং সে সিরিজেরই মাধ্যমে বাংলাদেশ খুঁজে পায় এক নতুন বোলিং সেনসেশন।
মোস্তাফিজ, মিরপুরে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বোলার !!
ভারতের পর বাংলাদেশে সফর করতে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা। সে সিরিজেও দলের প্রত্যাশামতো বোলিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে সমর্থ হন, দ্য ফিজ। সে সিরিজে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ হারলেও , দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ওয়ানডেতে জয়লাভ করে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয়লাভ করে বাংলাদেশ। সে সিরিজে মোস্তাফিজ মোট ৫টি উইকেটের পাশাপাশি দারুণ ইকোনোমি রেটেও বোলিং করেন।

মোস্তাফিজুর রহমান , ইঞ্জুরির কারণে ২০১৬ এশিয়া কাপ এবং ২০১৬ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পুরো না খেলতে পারলেও , যতটুকু খেলেছেন তার মধ্যেই দারুণ বোলিংয়ের প্রদর্শন করেছেন। ২০১৬ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাত্র ৩ ম্যাচ খেলে তিনি মোট ৯ টি উইকেট নিয়েছেন, যেখানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ৫ উইকেটের বোলিং স্পেলও রয়েছে।
২০১৬ আইপিলেও মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। আইপিএলের সেবারের আসরে মোস্তাফিজ মোট ১৭টি উইকেট তুলে নেন। এরপর, কাধের ইঞ্জুরিতে পড়েন দ্য ফিজ। এরপরে, বিভিন্ন সময়ে নিজের ঝলক দেখালেও পুরোপুরি ধারাবাহিকভাবে বোলিংয়ে নিজের সে পুরনো ধার খুব কমই দেখাতে পেরেছেন। এতো কিছু সত্ত্বেও, মোস্তাফিজ দিনের পর দিন বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যেই বাংলাদেশকে বেশ কিছু স্মরণীয় জয় উপহার দিয়েছেন।

মোস্তাফিজের বোলিং স্টাইল এবং তার বোলিংয়ে করা বিশেষ কিছু ভ্যারিয়েশন, মোস্তাফিজকে অন্যান্য বোলার থেকে আলাদা করে রেখেছে। আর মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মোস্তাফিজ হলেন বিশ্বের সব থেকে ভয়ঙ্কর বোলার।
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মোস্তাফিজ ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে নিয়েছেন ৩ ম্যচে ৯ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এ মিরপুরের মাটিতে নিয়েছেন ২ ম্যাচে ৩ উইকেট। ওয়ানডে ফরমেটে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মোস্তাফিজ ২১ ম্যাচে ৪৭ উইকেট নিয়েছেন যেখানে তার বোলিং গড় ১৪.৯৩ । এছাড়াও, আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে মিরপুরে ২৬ ম্যাচে তিনি মোট ৩৭ উইকেট নিয়েছেন।
২০২১ এ ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি টোয়েন্টি সিরিজ জয়ে মোস্তাফিজের অবদান ছিলো অনস্বীকার্য। এবারের বিপিএলেও মোস্তাফিজ বেশ ভালো বোলিং করেছেন। এবারের বিপিএলের একমাত্র ৫ উইকেট পাওয়া বোলারও তিনি।
এবারের বিপিএলে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলছেন দ্য ফিজ। মিরপুরে অনুষ্ঠিত হওয়া বিপিএলের সর্বশেষ ম্যাচে, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ম্যাচেই কুমিল্লার হয়ে নিয়েছেন ৫ টি উইকেট। সে ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বোলিংয়ের সময়, বৃষ্টির বাধা নামে। বৃষ্টির আগে মোস্তাফিজ ১ ওভারে দিয়েছিলেন ১৫ রান। কিন্তু, বৃষ্টির পরবর্তী সময়ে খেলা মাঠে গড়ালে তিনি গুনে গুনে নিয়েছেন ৫ টি উইকেট।
বৃষ্টির পূর্ববর্তী সময়ে, মোস্তাফিজ তার করা ডেলেভারীগুলোর বেশিরভাগ ডেলিভারীই ফুলার লেন্থে পিচ করিয়েছেন। কিন্তু, বৃষ্টি পরবর্তী সময়ে মোস্তাফিজ পিচের ড্যাম্পনেসকে কাজে লাগিয়ে নিজের ডেলিভারীগুলো আরেকটু পিছে পিচ করিয়েছেন যার কারণে, মোস্তাফিজ এ ম্যাচে ৫ উইকেটের ম্যাজিকাল ফিগার স্পর্শ করেন।
মিরপুরে এর আগে, মিচেল স্টার্ক, জাসপ্রিত বুমরাহ, জশ হ্যাজেলউডের মতো বিশ্বমানের বোলাররাও বোলিং করে গেছেন। তবুও, মোস্তাফিজকেই মিরপুরের মাঠে বিশ্বের মাঠে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বোলার বলা হয়। মিরপুরে , পিচের স্লোনেসকে কাজে লাগিয়ে মোস্তাফিজের অ্যাকুরেট কাটারই এই মাঠে মোস্তাফিজকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বোলার বানিয়েছে। মোস্তাফিজ ছুটবেন দুরন্ত গতিতে, দিনের পর দিন নিজেকে নিয়ে যাবেন এক অনন্য উচ্চতায় , মিরপুরসহ ক্রিকেটীয় সকল ভেন্যুতে লাল সবুজের পতাকা, অঙ্কন করবেন এই যেন দেশের সকল ক্রিকেট প্রেমীর প্রত্যাশা।
আরো পড়ুনঃ