দক্ষিণ আফ্রিকা চোকার্স কেনো, ক্রিকেটে চোকার্স শব্দটি বেশ পরিচিত। ধারণা করা হয় ক্রিকেটে এই শব্দটির প্রথম প্রচলন করেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তী স্টিভ ওয়াহ। দক্ষিণ আফ্রিকাকে উদ্দেশ্য করে তিনি চোকার্স বলেছিলেন ১৯৯৮ সালের শুরুর দিকে। কিন্তু এই চোকার্স জিনিসটা কী? শিকড় খুজতে গেলে চোকার্স একটি ইংরেজি শব্দ৷ যার বাংলা অর্থ জামার কলার৷ কিংবা ভিন্ন আঙ্গিকে বললে যারা নির্দিষ্ট সময়ে টেনশনের জন্য শেষ মুহুর্তে কাজের সুন্দর সমাধান করতে ব্যর্থ হয়, তারাই চোকার্স। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে চোকার্স শব্দটি কেন জড়িয়ে গেল, কেনই তাদের এই নামকরণ হল এবং এর কারণগুলো চলুন জেনে নেয়া যাক।
দক্ষিণ আফ্রিকা চোকার্স কেনো ! Why South Africa is ‘chokers’ !

১৯৯২ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালঃ
১৯৬৯ সাল থেকে ক্রিকেট হতে রাজনৈতিক বিভিন্ন কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা৷ প্রায় ২২ বছর পর ১৯৯১ সালে ক্রিকেটে ফেরা দক্ষিণ আফ্রিকা জায়গা করে নেন ১৯৯২ এর বিশ্বকাপে। এত দীর্ঘ সময় পর ক্রিকেটে ফেরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে কারোই তেমন মাতামাতি ছিলনা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, জিম্বাবুয়ে ও ভারতকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সে সময় দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে বেশি জয় ছিল কেবলমাত্র নিউজিল্যান্ডের।
সেমিফাইনালের ম্যাচের বর্ণনা দেবার আগে ১৯৯২ সালের ক্রিকেটীয় দুটো নিয়ম জেনে আসা যাক। সেসময়ে ক্রিকেটে একটা নিয়ম ছিল, যাকে বলা হতো ‘দ্য রেইন রুল’। সেই নিয়ম অনুযায়ী, ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে যদি বৃষ্টি হয় তবে প্রথম ইনিংসের সবচেয়ে কম রান নেয়া ওভারগুলো কমিয়ে দেয়া হবে।
এছাড়াও ১৯৯২ বিশ্বকাপের বিশেষ একটি নিয়ম ছিলো, ব্রডকাস্টের হাতে সময়ের ভাগ্য ছেড়ে দেয়া। অর্থ্যাৎ, যে ব্রডকাস্ট দায়িত্ব পেয়েছে, সেই ব্রডকাস্ট একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে দেয় এবং সেই সময়ের মাঝে শেষ করতে হয় ম্যাচটি। সেক্ষেত্রে বৃষ্টি হলে অপেক্ষা না করেই কমাতে হয় ওভার! অদ্ভুত হলেও এই দুটি নিয়ম ছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপের সময়ে।
১৯৯২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সিডনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি ইংল্যান্ড। টসে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ফিল্ডিং এর সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সবাই অবাক হয়ে যায়। কারণ বৃষ্টির জন্য যদি ‘দ্য রেইন রুল’ এপ্লাই হয়, তখন ভাল রকমের সমস্যা হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকার। কিন্তু ক্যাপ্টেন ক্যাপলার ওয়েলস বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা না ভেবে নিজেদের সেরা সামর্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে ফিল্ডিং নিতে চান৷ ৪৫ ওভারে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ তখন ২৫২/৬। বৃষ্টির জন্য পিছিয়ে যাওয়া ম্যাচে ব্রডকাস্টিং চ্যানেলের বেধে দেয়া সময়ের কারণে নির্ধারিত ওভারের আগেই শেষ করতে হয় ইনিংস।
৪৫ ওভারে ২৫৩ রানের লক্ষ্যে ভালই এগোচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪২.৫ ওভারে ২৩০ রানের সময়ে শুরু হয় বৃষ্টি। জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৩ বলে ২২ রান ও ক্রিজে দুজন সেট ব্যাটসম্যান ব্রায়ান ম্যাকমিলান ও ডেভিড রিচার্ডসন। মনে হচ্ছিল ম্যাচটা দক্ষিণ আফ্রিকার নাগালের মধ্যেই। কিন্তু যখন বৃষ্টি থামলো তখন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ১ বলে ২২ রান! ২ ওভারের সময় ধরে চলে বৃষ্টি এবং প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার মেরিক প্রিঙ্গেল ২ টা মেইডেন নিলে ‘দ্য রেইন রুল’ অনুযায়ী সেই দুটি ওভার বাদ দেয়া হয় এবং এই সমীকরণ দাঁড়ায়! শেষ বলে ২ রান নিলে ১৯ রানে ম্যাচ হেরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
১৯৯৬ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালঃ
গ্রুপ বি তে দক্ষিণ আফ্রিকা পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, আরব আমিরাত ও নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে ৫ ম্যাচের ৫ টিতেই একতরফা জয় নিয়ে ওঠে কোয়ার্টার ফাইনালে। করাচিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে যখন কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ হয়, তখন দক্ষিণ আফ্রিকার ফর্ম দেখে সকলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৯৯৬ বিশ্বকাপের শেষ দেখে ফেলছিলেন। অথচ খুড়িয়ে খুড়িয়ে কোয়ার্টারে ওঠা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারার দিনের কাছে হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৬৪ রানের টার্গেটটাও ফর্মের তুঙ্গে থাকা আফ্রিকার কাছে বড় কিছু ছিলনা কিন্তু নিজেরাই সেটাকে বড় করে দেখে অল-আউট হয় ২৪৫ রানে!
১৯৯৯ বিশ্বকাপ সুপার সিক্স ও সেমিফাইনালঃ
১৯৯৯ বিশ্বকাপের সুপার সিক্সে লিডসে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচের কন্ডিশনটা এমন যে যদি দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটি জিতে যায় তবে সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে জিম্বাবুয়ে এবং অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাবে। অপরদিকে অস্ট্রেলিয়া যদি জিতে যায় তবে সেমিফাইনালে আবার মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। স্বভাবতই সেমিফাইনালে সহজ প্রতিপক্ষ পেতে ম্যাচটি জিততে চাইবে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৭১ করলে ম্যাচটা অনেকটাই নাগালে চলে আসে আফ্রিকানদের। কারণ সেই বিশ্বকাপে তখন পর্যন্ত এত রান তাড়া করে কেউই জিততে পারেনি। ৪৮ রানে ৩ উইকেট গেলে যখন জয়টা সময়ের দাবি, তখনই স্টিভ ওয়াহর ১২০* রানে জয়ের স্বাদ পায় অস্ট্রেলিয়া।
আগের ম্যাচটা অনেক কষ্ট করে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। স্টিভ ওয়াহর ব্যক্তিগত ৫৬ রানে ক্যাচটা মিস না হলে খেলার ফলাফল ভিন্ন হতে পারতো৷ তাই সেমিফাইনালেও ফেভারিট দক্ষিণ আফ্রিকা। শুরুতে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া ২১৩ রানে অল-আউট হলে অনেকটা সহজ লক্ষ্য দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে। কিন্তু এবারো তীরে এসে তরী ডুবালো আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকা ২১৩ রান করলে শেষ ৩ বলে প্রয়োজন ১ রান, হাতে ১ উইকেট৷ ১৯৯৯ বিশ্বকাপের টুর্নামেন্ট সেরা ক্রিকেটার ল্যান্স ক্লুজনার তখন স্ট্রাইকে।
কোন উপায় না পেয়ে যখন স্টিভ ওয়াহ সবাইকে বৃত্তের ভেতরে আনেন, তখন চতুর্থ বলে ডিফেন্স করেই দৌড় দেন ক্লুজনার। সেই বলের আগে কোন পূর্ব পরিকল্পনাও করেননি ক্রিজের দুই ব্যাটসম্যান ক্লুজনার ও ডোনাল্ড। যেন ক্রিকেটের প্রাথমিক পাঠ টাই তখন ভুলে গিয়েছেন তারা। প্রথমে না বললেও শেষে বাধ্য হয়েই দৌড় দেন ডোনাল্ড কিন্তু ততক্ষণে রান আউট করতে ভুল করেননি স্টিভ ওয়াহ, ফ্লেমিং ও গিলক্রিস্ট। ম্যাচটি টাই হয় এবং বাই লজ সিস্টেমে টুর্নামেন্টের মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া চলে যায় ফাইনালে!
২০০০ নক আউট টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালঃ
২০০০ সালের নক আউট টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেবারও নিজেদের শক্তির জানান দিচ্ছিল তারা। কিন্তু ভারতের ২৯৫ রানের বিপরীতে সেমিফাইনালে বলেই যেন আবার পা হরকায় আফ্রিকানরা। ২০০ রানে অল-আউট হয়ে ম্যাচটি হেরে বসে ৯৫ রানে!
২০০২ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি সেমিফাইনালঃ
নক-আউট টুর্নামেন্টের নাম পালটে হয়েছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। সেমিফাইনালে এবারো দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিপক্ষ ভারত। ভারতের ২৬১ রানের জবাবে ৩৬ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ১৯২ রান। সে সময়ে ১১৬ রান করা হার্শেল গিবস রিটায়ার্ড হার্ট হলে সেখানেই যেন ভেঙে যায় আফ্রিকানরা। ৩৬ ওভারে ১৯২/১ থেকে ৫০ ওভার শেষে ২৫১/৬ রানে শেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারত জয় পায় ১০ রানে!
২০০৩ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বঃ
ঘরের মাঠে সেবারের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের সমীকরণ এমন যে, পরের পর্বে যাবার জন্য ম্যাচটি জিততেই হবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। বৃষ্টির ফোটা যখন শুরু হয়, তখন ৪৪.৪ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ৬ উইকেটে ২২৩ রান। ক্যাপ্টেন শন পোলক ডাকওয়াথ লুইস মেথডে হিসাব করে মাঠে খবর পাঠান যে বাকি ২ বলে কোন উইকেট না হারিয়ে ৬ রান নিলেই ম্যাচটি জিতবে দক্ষিণ আফ্রিকা। মার্ক বাউচার ৫ম বলে ছয় মেরে ও শেষ বল কোনমতে ডিফেন্স করে চলে আসেন ড্রেসিংরুমে। কিন্তু ড্রেসিংরুমে এসেই তারা জানতে পারেন ৬ নয়, জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৭ রান। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরেও বৃষ্টি না থামায় ম্যাচটি টাই হয় এবং হিসাব ভুলের জন্যই ছিটকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা!
২০০৬ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি সেমিফাইনালঃ
গ্রুপপর্বে বি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল দক্ষিণ আফ্রিকা এ গ্রুপের রানার্স আপ দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয় সেমিফাইনালে। আবারো একটা অদ্ভুতুড়ে প্রেসারে দক্ষিণ আফ্রিকার ২৫৮ রানের পর ৪৪ ওভারেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর কাছে হেরে বসে তারা!
২০০৭ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালঃ
সে সময়ও টপ ফেভারিট দক্ষিণ আফ্রিকা এভারেজ ক্রিকেট খেলে শেষ পর্যন্ত সেমির দরজায় দেখা পায় ২০০৭ বিশ্বকাপের সেরা সাফল্য পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার। গ্রুপ পর্বেও এক ম্যাচে মুখোমুখি হয়ে পরাজিত হয়েছিল আফ্রিকানরা। যদিও ম্যাচটা সেমিফাইনাল, ম্যাচটা নতুন, হিসেবটাও নতুন। সেমিফাইনালের স্নায়ুচাপ নিতে আবারো ব্যর্থ দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাকগ্রা ও শন টেইট তোপে ২৭ রানে হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট। ম্যাচের তখন শুধু আনুষ্ঠানিকতাই বাকি৷ ১৫০ রানের টার্গেট দিলে ৩১.৩ ওভারেই তা টপকে যায় অজিরা।
২০১৫ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালঃ
৬ ম্যাচের চারটিতে জিতে ও কোয়ার্টার ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে ফেভারিট হিসেবে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচটিতে অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে। উইকেটরক্ষক ডি কক মিস করেন সহজ রান আউট। সময়ের সেরা ফিল্ডার এবি ডি ভিলিয়ার্স মিস করেন গ্র্যান্ড এলিয়টের রান আউট, যিনি মূলত ঘুরিয়েছেন ম্যাচটা। শেষ পর্যন্ত যখন ২ বলে ৫ রান প্রয়োজন, ঠিক তখনই অন্যতম সেরা বোলার ডেল স্টেইনের বলে ৬ মেরে ম্যাচটি নিজেদের করে নেয় সেই এলিয়ট।
নামকরণের শুরুঃ
১৯৯৭/৯৮ ত্রিদেশীয় সিরিজঃ
এতক্ষণ বলেছি চোকার্স হবার কারণ৷ এবার জানাব কেন স্টিভ ওয়াহ দিয়েছিলেন চোকার্স তকমা। সময়টা ১৯৯৮ সালের জানুয়ারি মাস। অস্ট্রেলিয়ায় চলছিল নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাথে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ। ৮ ম্যাচের ৭ টিতেই জিতে ফাইনালে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেসময় ফাইনাল হতো ৩ ম্যাচে। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ম্যাচেই ৬ রানে জয় পায় আফ্রিকানরা। পরবর্তী দুই ম্যাচের একটিতে জিতলেই সিরিজটি নিজেদের হয়ে যাবে। হট ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বাজি ধরার পক্ষে কেও না থাকলেও স্টিভ ওয়াহ বলেছিলেন, “শেষ দুই ম্যাচ জিতে ট্রফি নিজেদের করে নেবে অস্ট্রেলিয়া। কারণ কাজের সময় নার্ভ ধরে রাখতে পারেনা দক্ষিণ আফ্রিকা।” অনেকে এটাকে স্লেজিং হিসেবে দেখলেও শেষ পর্যন্ত সত্যিই দুই ম্যাচ হেরে ট্রাইনেশন কাপটি খুইয়েছিল আফ্রিকানরা!
চোকার্স তকমা স্বীকারঃ
২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি সেমিফাইনালঃ
সেবার একটি মাত্র ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে ওঠা

দক্ষিণ আফ্রিকা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অল-আউট হয় মাত্র ১৭৫ রানে। ৭৫ বল হাতে রেখেই ৭ উইকেটে জিতেছিল ইংলিশরা। তখন দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ গ্যারি ক্রিশ্চিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, “ম্যাচটাতে আমরা চোক করেছি। আমাদের এটি স্বীকার করা উচিত।”
বড় মঞ্চে গিয়ে কাউকে না কাউকে ব্যর্থ হতেই হয়। নিউজিল্যান্ডের কথাই ধরুণ৷ ১২ বিশ্বকাপের ৮ বারই তারা সেমিফাইনালে উঠেছে৷ ফাইনালে যেতে পেরেছে মাত্র দুইবার (২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপ) । তাহলে নিউজিল্যান্ডকে চোকার্স বলা হয়না কেন? কারণ এটাই যে, শক্তিমত্ত্বা বিবেচনায় ও খেলার ধরণে বলে দেয় নিউজিল্যান্ডের হারটা অঘটন নয়৷ কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা যে ক’বার বাদ পড়েছে তার মূল কারণ চাপ সহ্য করতে না পারাটা।
ক্রিকেটে বাজে দিন আসবেই। ম্যাচের পর ম্যাচ জিততে থাকা কখনো সম্ভব নয়। সম্ভব নয় ভাগ্যদেবতার সবসময় পাশে থাকাটাও৷ তবুও হট ফেভারিট দল হিসেবে বিশ্বকাপে গিয়ে কিংবা গ্রুপ পর্বে সেরা পারফর্ম করে নক-আউট স্টেজে সহজ প্রতিপক্ষের কাছে অস্বাভাবিক কলাপ্স ঘটিয়ে বার বার হারতে থাকা দলটার হারকে স্নায়ুচাপ সহ্য করার অক্ষমতাকে দায়ী করাটাই সমীচীন নয় কি?
তবে রাসেল ডোমিঙ্গো অবশ্য স্নায়ুচাপকে মানতে নারাজ৷ তিনি ক্রিকেটারদের স্কিলের দিকেই নজর দিতে বলেছেন৷ এজন্য ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে গ্যারি কারস্টেনের হাত থেকে দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পরই ছেটে ফেলেন মনোবিদ অপটনকে। দশের অধিক কোচিং স্টাফ রেখেছিলেন দলের সাথে৷ ব্যাটিং কোচ হিসেবে মাইক হাসির সাথে নেন গ্যারি কারস্টেনকে। বোলিং কোচ ডোনাল্ডের সাথে ডেথ ওভার বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দেন চার্লস ল্যাঙ্গাভেটকে! সে সময়ে দলে ছিল র্যাংকিং এর নাম্বার ওয়ান ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স ও নাম্বার ওয়ান ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইন। তবুও সেমিফাইনালে তীরে এসে তরী ডুবিয়ে চোকার্স তকমাটা বাচিয়ে রেখেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা! ডোমিঙ্গোর শত চেষ্টায়ও ছাড়ানো যায়নি চোকার্স তকমা।
অনেকেই অনেক রকম মত দিচ্ছেন৷ ক্রিকেট মাঠে সামর্থ্য থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তারচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক সময়ে সামর্থ্যের সফল প্রয়োগ ঘটানো৷ সবকিছুর শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন শুধুমাত্র একটিই জিনিস৷ প্রয়োজনের দিনে সঠিক সময়ে নিজেদের সামর্থ্যের সফল প্রয়োগ ঘটানো৷ কিন্তু এই কাজটিই যে সবচেয়ে কঠিন, তা হয়তো হারে হারে টের পাচ্ছে।
আরও পড়ুন: