শিবনারায়ণ চন্দরপল [ Shivnarine Chanderpaul ] দ্য আনসাং হিরো অব ক্রিকেট : ক্রিকেটের কিংবদন্তী ব্যাটারদের কথা তুললেই শিবনারায়ণ চন্দরপলের নাম অনায়াসেই বলা যায়। উইন্ডিজ ক্রিকেটের এক ক্লাসিকাল ব্যাটিং কিংবদন্তী চন্দরপল। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই ব্রায়ান লারার স্টারডমের কারণে তেমন স্পটলাইট পাওয়া হয়নি চন্দরপলের। তবে, তার মধ্যেও অগোচরে নিজের কাজ ঠিকমতো করে চন্দরপল নিজেকে নিয়ে গেছেন কিংবদন্তীদের কাতারে।
[ শিবনারায়ণ চন্দরপল : দ্য আনসাং হিরো অব ক্রিকেট ]
১৯৯৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ক্রিজে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা এবং তার বিচিত্রময় ব্যাটিংয়ের কারণে ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে তিনি এক আলাদা স্থান দখল করে আছেন।
চন্দরপল ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২১ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছিলেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার পর প্রায় ৪১ বছর বয়স পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের মিডল-অর্ডার আগলে রেখেছিলেন তিনি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের চেয়ে সাদা পোশাকে তার আধিপত্য ছিলে বেশি। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে ব্রায়ান লারাসহ অন্যান্য সমসাময়িক ব্যাটসম্যানদের ছায়া হয়ে থাকা চন্দরপল ঠিকই তার দায়িত্ব যথাযথ পালন করতেন। তিনি তার সেরা সময় কাটিয়েছিলেন শেষ বয়সে এসে। যে বয়সে ক্রিকেটাররা বিদায় জানানোর জন্য উপযুক্ত সময় খোঁজে, তিনি সেই বয়সে এসে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছিলেন। লারার বিদায়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভঙ্গুর ব্যাটিং লাইনআপের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলেন তিনি।
ভিন্নধর্মী স্টাইলে ব্যাট করা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান যখনি দল বিপদের মুখে পড়তো, তখনি ত্রাণকর্তা হিসাবে দলকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতেন। ১৯৯৪ সালের ১৭ মার্চ জর্জটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল চন্দরপলের। অভিষেকের ২১ বছর পর একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ব্রিজটাউনে ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি মোট ১৬৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। ওয়ানডে ক্রিকেটেও অভিষেক ঘটেছিল ১৯৯৪ সালে। ভারতের বিপক্ষে ফরিদাবাদে ১৭ই অক্টোবর নিজের অভিষেক ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। অভিষেক ম্যাচে ব্যাট কিংবা বল, কোনো ডিপার্টমেন্টেই ভারতকে হারাতে প্রয়োজন পড়েনি তার।
তিনি ৩৫ বছর বয়সের পর ৪৩ ম্যাচ খেলে নয়টি শতক এবং ১৪টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৫৭.৭৩ ব্যাটিং গড়ে ৩,২৯১ রান করেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে ২৫ জন ব্যাটসম্যান ৩৫ বছর বয়সের পর দুই সহস্রাধিক রান করেছে, তার মধ্যে দ্বিতীয় সেরা ব্যাটিং গড় চন্দরপলের। তার উপরে আছেন ২৩ ম্যাচে ৬০.১৯ ব্যাটিং গড়ে ২,৫২৮ রান করা কুমার সাঙ্গাকারা। বয়স চন্দরপলের জন্য বাধা হয়ে না দাঁড়ালেও একসময় ঠিকই বয়সের কাছে হার মানতে হয় তাকে। ২০১৪ সালের শেষদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচ ইনিংসে ৯১ রান এবং ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ছয় ইনিংসে ৯২ রান করার পর তাকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরবর্তী সিরিজে আর ডাকেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড।
চন্দরপলের টেস্ট ক্যারিয়ার থেমে যায় ব্রায়ান লারার চেয়ে ৮৬ রান পিছিয়ে থেকে। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থেমে গেলেও ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ৩৮৫টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ৭৭টি শতক এবং ১৪৪টি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৫৩.১৭ ব্যাটিং গড়ে ২৭,৫৪৫ রান করা শিবনারায়ণ চন্দরপল প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটকে বিদায় জানান তার ছেলে তেজনারায়ণ চন্দরপলের সাথে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলে।
শিবনারায়ণ চন্দরপল নামটি আমাদের মনে এন দেয় নস্টালজিয়ার এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। শিবের ক্যারিয়ারজুড়ে আলোচনায় ছিল তার দুই চোখের নিচের কালো দাগ। হোক পুরো কালো বর্ণ অথবা নিজ দেশের পতাকা—শুরু থেকেই প্রতিটি ম্যাচে তাঁকে দেখা গেছে এই রূপেই। বিশেষ কোনো স্টাইল নয়, বরং রোদের প্রতিফলন থেকে বাঁচতেই এমন ‘প্যাচ’ ব্যবহার করতেন চন্দরপল। তবে এই প্যাচ ঠিক কতটুকু কার্যকরী, সেটির সপক্ষে এখনো কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: