ফাদার অব ক্রিকেট

ফাদার অব ক্রিকেটঃ ১৮৪৮ সালের ১৮ জুলাই ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে জন্ম ডব্লিউ জি গ্রেসের। ক্রিকেট ফাদারের টেস্ট ক্যারিয়ার খুব লম্বা না। উনিশ শতকে টেস্ট ম্যাচ কম হওয়ায় ফাদার অব-ক্রিকেট ডব্লিউ-জি গ্রেসের ফাদার অব-ক্রিকেট টেস্ট ক্যারিয়ার থেমেছে মাত্র ২২ টেস্টে। ২২ টেস্টে মাত্র ২৩ ইনিংস ব্যাট করেছেন।

ফাদার অব ক্রিকেট, ক্রিকেটে কিংবদন্তীর সংখ্যা কতো? অদ্ভুত প্রশ্ন বটে। একেক জনের কাছে একেক জন কিংবা অনেক জন ক্রিকেটের কিংবদন্তী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বয়স দেড়শ ছুঁইছুঁই হলেও ক্রিকেটের চর্চা হয় চারশ বছরের বেশি সময় ধরে। ক্রিকেটের এসেছেন অসংখ্যা রথী মহারথী।

নাম কামিয়েছেন অনেক ক্রিকেটার। ব্যাটে রান, বোলিংয়ে উইকেট নিয়েছেন তো হাজার হাজার ক্রিকেটার। অনেকেই অবদান রেখেছেন ব্যাটে-বলে সমানতালে। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে ক্রিকেটের আদি পিতা উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস। সংক্ষেপে ফাদার অব-ক্রিকেটে; ডব্লিউ-জি গ্রেস। ফাদার অব-ক্রিকেট নিয়েই এই লেখা।

ফাদার অব ক্রিকেট
ডব্লিউ-জি গ্রেস

 

ডব্লিউ-জি গ্রেস দুবার ছিলেন নট আউট। রান করেছেন ১০৯৮। গড় ছিল ৩২। টেস্টে ছিল দুটো সেঞ্চুরি আর পাঁচটি ফিফটি। ছিলেন অল-রাউন্ডার। তবে ২২ টেস্টে মাত্র ১৩ ইনিংস বল করা ডব্লিউ-জি গ্রেস উইকেট নিয়েছেন ৯টি। ফাদার অব-ক্রিকেটের বোলিং গড় ছিল ২৬।

তবে এই ক্যারিয়ারের জন্য আসলে তাকে ফাদার অব-ক্রিকেট বলা হয় না। সে কারণও ভিন্ন। তার ছিল লম্বা ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ার। ছিলেন নানা গুণের অধিকারি। সব্যসাচী এই অলরাউন্ডার ব্যাটিংয়ে রান করেছেন, বোলিংয়ে নিয়েছেন উইকেট। তার প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার দেখলে যে কারো চোখ হবে ছানাবড়া। যেমন ছিল রান, ফাদার অব-ক্রিকেটের তেমনি ছিল উইকেটও।

ব্যাটিংয়ে ডব্লিউ-জি গ্রেস ৮৭০ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৪৪৭৮ ইনিংসে রান করেছে পঞ্চাশ হাজারের বেশি। ডব্লিউ-জি গ্রেস ৫৪২১১ রান করেছন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। ব্যাটিং গড় ছিল প্রায় চল্লিশ।

ফাদার অব-ক্রিকেট প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১২৪ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। শুধু কী তাই? প্রথম শ্রেণির তার রয়েছে ২৫১টি ফিফটিও। ফাদার অব-ক্রিকেটের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস ছিল ৩২৪ রানের।

ফাদার অব-ক্রিকেট ৮৭০ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচে উইকেট তুলেছেন ২৮০৯। ডব্লিউ-জি গ্রেসের বোলিং গড় ছিল মোটে ১৮। প্রতি উইকেট নিতে ফাদার অব-ক্রিকেট প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বল করেছেন ৪৪টি।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৪০ বার নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। ম্যাচে দশ উইকেট নিয়েছেন ৬৪ বার। অবিশ্বাস্য এক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ার ছিল ডব্লিউ-জি গ্রেসের। ফিল্ডিংয়ে কম যায়নি, নিয়েছেন ৮৭৬ ক্যাচ।

ভদ্রলোক ডব্লিউ জি গ্রেস স্বীকৃত ক্রিকেট খেলেছেন প্রায় ৪৩ বছর। ছিলেন সব্যসাচী অলরাউন্ডার। নিজের ব্যাটিং বা শুধু বোলিং দিয়েও জায়গা পেতেন যেকোন দলে। তখনকার সময়ে লোকজন বাড়তি টাকা খরচ করত শুধু ডব্লিউ-জি গ্রেসের খেলা দেখতে আসতে।

ডব্লিউ-জি গ্রেসের ব্যাটিং নিয়ে বলে শেষ করা যাবেনা। ফাদার অব-ক্রিকেট ব্যাট হাতে একইসঙ্গে ফ্রন্ট ফুট, ব্যাক ফুট আবার অন সাইড, লেগ সাইডেও ছিলেন সমান পারদর্শী। শট খেলতেন উইকেটের চারপাশে। এই ইংলিশ ম্যান ছিলেন একজন মিডিয়াম পেসার। নিয়মিত তুলতেন উইকেট। ফিল্ডিংয়েও ছিলো তার বিশেষ খ্যাতি।

ফাদার অব ক্রিকেট
ডব্লিউ-জি গ্রেস

ডব্লিউ-জি গ্রেস শুধু একা না, তার পুরো পরিবার জড়িত ছিল ক্রিকেটের সঙ্গে। ডব্লিউ-জি গ্রেসের ছেলে, ভাই, কাকা, কাজিনরাও খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। ডব্লিউ-জি গ্রেসের পরিবারের দুজন খেলেছেন টেস্ট ক্রিকেট, আটজন খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। দারুণ ব্যাপার, ফাদার অব-ক্রিকেট খ্যাত ডব্লিউ-জি গ্রেস তার দুই ছেলের সঙ্গেও খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট।

অনেকের কাছে ক্রিকেট ফাদার বলে খ্যাত এই ডব্লিউ-জি গ্রেস ছিলেন একজন ডাক্তারও। ক্রিকেটের জন্য ডাঃ ডব্লিউ-জি গ্রেস নিজের মেডিকেল ডিউটি ছেড়েছিলেন কখনো কখনো! একবার তার ক্যাচ নেওয়ার সময় এক ফিল্ডারের লোহার বস্তুর আঘাত প্রাপ্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন ডব্লিউ-জি গ্রেস। আরেকবার এক ক্রিকেটারের রেলিংয়ের সাথে লেগে গলা কেটে যাওয়ার অবস্থা হলে আধ ঘণ্টা ধরে তার রক্তপাত বন্ধ করে জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেন ডাক্তার জি গ্রেস।

ফাদার অব ক্রিকেট
ডব্লিউ-জি গ্রেস

ডব্লিউ জি গ্রেস অসাধারণ ক্রীড়াবিদ ছিলেন। ফাদার অব-ক্রিকেট ১৮৮৬ সালের আগস্টে ক্রিস্টাল প্যালেসে জাতীয় অলিম্পিয়ান গেমসে ৪০০ মিটারে শিরোপা জিতেছিলেন। দৌড় ছাড়াও, তিনি একজন চমৎকার নিক্ষেপকারী ছিলেন।

ডব্লিউ-জি গ্রেস ওয়ান্ডারার্সের হয়ে ফুটবল খেলেছিলেন। যদিও ফাদার অব ক্রিকেট তাদের এফএ কাপ বিজয়ী দলের কোনটিতেই ছিলেন না। এছাড়া গলফ, লন বল এবং কার্ভিংয়েও বেশ পারদর্শী ছিলেন তিনি।

ডব্লিউ-জি গ্রেস প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে লাঞ্চের আগে সেঞ্চুরি করেন। ১৮৭৩ সালে দ্য ওভালে ১৩৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ক্রিকেট ইতিহাসে তিনিই প্রথম অলরাউন্ডার হয়েছিলেন যিনি এক মৌসুমে এক হাজার রান এবং ১০০ উইকেটের “ডাবল” এর মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ডব্লিউ-জি গ্রেস সব মিলিয়ে এই ডাবল আট বার করে করেছিলেন।

ডব্লিউ-জি গ্রেসের জন্ম জুলাইয়ে। ফাদার অব ক্রিকেট শেষ ক্রিকেট ম্যাচও খেলেন জুলাইয়ে। ডব্লিউ-জি গ্রেস ১৯১৪ সালের ২৫ জুলাই নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংস খেলেন। এক ক্লাব ম্যাচে করেন ৬৯ রান। ক্রিকেট ছাড়ার এক বছরের মধ্যে দুনিয়াটাও ছেড়ে দেন উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস। ৬৬ বছরে ছাড়েন ক্রিকেট আর ৬৭ বছরে দুনিয়া।

 

ফাদার অব ক্রিকেট
ডব্লিউ-জি গ্রেস

 

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমাদের “যোগাযোগ” আর্টিকেলটি ভিজিট করুন।

ক্রিকেট সম্পর্কে আরও পড়ুন:

Leave a Comment