বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলার বাঘিনীদের উপস্থিতি

বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলার বাঘিনীদের উপস্থিতি

এ পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চিরকল্যাণকর ,অর্ধেক তার করিয়াছে নারী ,অর্ধেক তার নরকাজী নজরুল ইসলামের লিখা এই চরণ দুটিই সমাজ গঠনে নারীদের তাৎপর্য ঠিকমতো বুঝিয়ে দেয় আমাদের। ক্রিকেটে বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দলের পাশাপাশি নারী ক্রিকেট দলও বেশকিছু স্মরণীয় জয় উপহার দিয়েছে।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনের কথা চিন্তা করতে গেলে জাতীয় ক্রিকেত দলের তুলনায় নারী ক্রিকেট দলই বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক শিরোপা এনে দিয়েছে। তবে, একদমই সহজ ছিলো না নারী-ক্রিকেটারদের এ যাত্রা।নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে পাড়ি দিতে হয়েছে এ কঠিন পথ।

[ বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলার বাঘিনীদের উপস্থিতি ]

২০১০ এশিয়া কাপ, আইসিসি নারী ক্রিকেট টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন, ওয়ানডে নারী-ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন কিংবা আন্তর্জাতিক টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া। এসব কিছুই এসেছে মাত্র ১৬ বছরে।

২০০৬ সালেই প্রথম বাংলাদেশ নারী-ক্রিকেট দল গঠিত হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এতসব অর্জন ছাড়াও, বাংলাদেশ নারী-ক্রিকেট দল ২০১০ এবং ২০১৪ এশিয়ান গেমসে রৌপ্য পদক এবং ২০১৯ দক্ষিণ এশিয়া গেমসে স্বর্ণপদক জয় করে।

বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলার বাঘিনীদের উপস্থিতি
ক্রিকেট খেলছেন সালমা খাতুন

সালওয়ার কামিজ পড়া মেয়েটিই হচ্ছেন, এক সময়ের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সালমা খাতুন। কৃষক পরিবারের বেড়ে ওঠা সালমা খাতুন ক্রিকেট খেলতেন নিজের মামার সাথে এবং পাড়ার ছেলেদের সাথে। যার কারনে, গ্রামের মানুষদের কটু কথা থেকে তিনি রেহাই পাননি।

বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলার বাঘিনীদের উপস্থিতি
সালমা খাতুন

২০০৬ সালের নারী ক্রিকেট দলের প্রথম ব্যাচে ছিলেন সালমা। এরপর, দীর্ঘদিন বাংলাদেশ নারী- ক্রিকেট দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত এক দশকে বাংলাদেশ নারী-ক্রিকেটের ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছেন সালমা। সালমা আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৮ ম্যাচে ব্যাট হাতে করেছেন ৩৯৯ রান এবং বল হাতে নিয়েছেন ৪২ উইকেট। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৭৮ ম্যাচে ৫৬৪ রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ৭১টি উইকেট।

নারী ক্রিকেট দলের লেগস্পিনার রুমানা আহমেদের তো মা চাইতেন না যে, তিনি ক্রিকেটার হন। এছাড়াও, ছেলে ক্রিকেটারদের সাথে খেলার সময় তিনি দলও পেতেন না খেলার। তবুও, নানা প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে বর্তমান নারী- ক্রিকেট দলের এক মহাগুরুত্বপুর্ণ সদস্য হয়ে গেছেন তিনি। ২০১১  সালে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার।

বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলার বাঘিনীদের উপস্থিতি
রুমানা আহমেদ

শুধু বল হাতে নয়, বরং ব্যাট হাতেও হয়ে উঠেছেন নারী ক্রিকেট দলের এক কান্ডারি। নারী এশিয়া কাপ জয়েও ছিলেন দলের এক গুরুত্বপুর্ণ সদস্য।রুমানা এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ওয়ানডে  ক্রিকেটে ৪৩ ম্যাচে ৯১৪ রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ৪৬টি উইকেট। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৬৯ ম্যাচে ৭৪৮ রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ৬১টি উইকেট।

 

জাহানারা আলম, বর্তমান নারী ক্রিকেট দলের পেস বোলিং ইউনিটের নেতৃত্ব তার। হাতে তিনি বিভিন্ন সময় পরিবারের সাপোর্ট পেলেও, পারা প্রতিবেশি এবং আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় কটু কথা শুনেছেন তিনি।তবুও দমে যাননি তিনি, চালিয়ে গেছেন লড়াই। নিজের এসএসসি পরীক্ষা বাদ দিয়ে , তার বাবাই তাকে জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন।

বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলার বাঘিনীদের উপস্থিতি
জাহানারা আলম

তার ক্রিকেট খেলার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিযোগও এসেছে তার। ২০১১ সালে , আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪১ ম্যাচে ৪০ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৭১ ম্যাচে নিয়েছেন ৫৫টি উইকেট। বাংলাদেশের নারী পেসারদের মধ্যে জাহানারাই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।

নারী ক্রিকেট দলের অন্যতম ভরসাযোগ্য ব্যাটার নিগার সুলতানা জোতিতো সকাল ৬ টায় প্র্যাক্টিসে যাওয়ার সময় অনেকে তাকে সরাসরি জাহান্নামিই বলতেন।এছাড়া, অনেকে তাকে লাজ লজ্জাহীনও বলতেন। বাংলাদেশের নারী-ক্রিকেট দলের সবচেয়ে ভরসাযোগ্য ব্যাটারদের মধ্যে তিনি একজন।আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিও তার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালে অভিষেক হয় তার। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে ২৪ ম্যাচে ২২.৫০ গড়ে ৪০৫ রান করেন এবং আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৫৬ ম্যাচে ২২.৬১ গড়ে ৮৮২ রান করেন।

বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলার বাঘিনীদের উপস্থিতি
নিগার সুলতানা জোতি

 

এতো, সমালোচনা এবং ভর্ৎসনার শিকার হয়েও দমে যাননি বাংলার এই বাঘিনীরা। পাড়ি দিয়েছেন কঠিন থেকে কঠিনতম পথ। নিজেকে উজাড় করে দেশের নারী ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়েছেন এবং এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তারাই যেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, বেগম রোকেয়া , জাহানারা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতু্ন্নেয়াসা মুজিবের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সমাজের নারীউন্নয়ন হিংসু পিশাচদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment