টি টোয়েন্টি ভেন্যু – চট্টগ্রামই দেশের আদর্শ ভেন্যু?

টি টোয়েন্টি ভেন্যু, চট্টগ্রামই দেশের আদর্শ ভেন্যু?

শেষ হলো বিপিএল ২০২২ এর চট্টগ্রাম পর্ব।বাংলাদেশে টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটার এবং বোলার উভয়ের জন্যই সুযোগ সুবিধা দিতে পারে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পিচ। চট্টগ্রামের পিচে ব্যাটাররা যেমন রান পেয়েছেন, ঠিক তেমনি বোলাররাও নিজেদের বোলিং নৈপুণ্যের প্রদর্শন করেছেন । এ চট্টগ্রাম পর্বে দর্শকরা যেমন দেখেছেন আক্রমণাত্মক ব্যাটিং, ঠিক তেমনি উপভোগ করেছেন উঁচু  স্তরের পেস বোলিং।

চট্টগ্রামই দেশের টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের আদর্শ ভেন্যু ?
লেন্ডল সিমন্স

এছাড়া, বিপিএলের এই চট্টগ্রাম পর্বে দেখা মিলেছে টি টোয়েন্টিসুলভ দলীয় ইনিংস। সবমিলিয়ে ঢাকার তুলনায় বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বেই দেখা মিলেছে থ্রিলিং টি টোয়েন্টি অ্যাকশনের।

বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে  বেশকিছু বড় ইনিংসের দেখা পেয়েছে ভক্তরা। সর্বপ্রথমে বিপিএলের এবারের আসরের ২টি সেঞ্চুরির কথা বলতেই হয়।

[ টি টোয়েন্টি ভেন্যু ]

লেন্ডল সিমন্সঃ বিপিএলের এবারের আসরের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান সিলেট সানরাইজার্স ব্যাটার লেন্ডল সিমন্স। তিনি ৬৫ বলে ১১৬ রানের এক দানবীয় ইনিংস খেলেন মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার বিপক্ষে।

উইকেটের চারপাশেই তিনি স্বাচ্ছন্দে রান করতে থাকেন। লেন্ডল সিমন্সের এই ইনিংসে ছিলো ১৪টি চার এবং ৫টি ছয়ের মার। তবে দলের অন্যান্য ব্যাটারদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় সিলেট সানরাইজার্স সে ম্যাচটি জিততে পারেনি।

চট্টগ্রামই দেশের টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের আদর্শ ভেন্যু ?
তামিম ইকবাল

তামিম ইকবালঃ বিপিএলের মিরপুর পর্বে ড্যাশিং ওপেনার তামিম ২টি ফিফটির দেখা পেলেও সে ইনিংসগুলোর স্ট্রাইক রেটের কারণে, অনেকে সেগুলোকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং বলে আখ্যায়িত নাও করতে পারেন। তবে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে তামিমের ম্যাচ উইনিং সেঞ্চুরি সব সমালোচকেরই সমালোচনার জবাব দিয়েছে। জবাব দিয়েছে সব নিন্দুকের নিন্দার।

তামিম সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে ৬৭ বলে ১১৪ রানের একটি ইনিংস খেলেন যেখানে ১৭টি চার এবং ৪টি ছয়ের মার ছিলো। তামিমের সে ইনিংসের স্ট্রাইক রেট ছিলো ১৭৩.৪৪। তামিমের এই ইনিংসের কল্যাণে ঢাকা সে ম্যাচটি ৯ উইকেটে জিততে সমর্থ হয়।

লেন্ডল সিমন্স এবং তামিমের সে ইনিংস ছাড়াও, বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে বেশকিছু আক্রমণাত্মক অর্ধশত রানের দেখা পাওয়া যায়।

উইল জ্যাকসঃ সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে এবারের বিপিএলের দ্রুততম ৫০ রানের ইনিংস খেলেছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ব্যাটার উইল জ্যাকস। উইল সিলেটের বিপক্ষে ১৯ বলে ৫২ রানের এক অতি আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলেন।যেখানে ছিলো, ৭টি চার এবং ৩টি ছয়ের মার। উইলের এই ইনিংসের কারণে চট্টগ্রাম সে ম্যাচে ২০২ রানের বিশাল এক ম্যাচ উইনিং টোটাল পায়।

চট্টগ্রামই দেশের টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের আদর্শ ভেন্যু ?
উইল জ্যাকস

আনামুল হক বিজয়ঃ বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে আনামুল হক বিজয়ের এক আক্রমণাত্মক ইনিংসের দেখা মেলে। তিনি চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ৪৭ বলে ৭৮ রানের এক ইনিংস খেলেন। বিজয়ের এই ৭৮ রানের ইনিংসে ছিলো ৯টি চার এবং ৩টি ছয়ের মার। বিজয়ের এই ইনিংসটি সিলেটকে ম্যাচটি জিততে সাহায্য না করলেও, তিনি যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন ততক্ষণ ম্যাচে সিলেটের জয়ের সম্ভাবনা বজায় রেখেছিলেন।

কলিন ইনগ্রামঃ বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে সিলেটের প্রোটিয়া ব্যাটার কলিন ইনগ্রামও একটি চমৎকার ইনিংস খেলেন। তিনি চট্টগ্রামের বিপক্ষে ৩৭ বলে ৫০ রানের একটি ইনিংস খেলেন।সে ইনিংসে ৫টি চার এবং ২টি ছয়ের মার ছিলো।

চট্টগ্রামই দেশের টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের আদর্শ ভেন্যু ?
বিজয় এবং ইংগ্রাম

ফ্যাফ ডু প্লেসিঃ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে এবারের বিপিএলে কূমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ রান করেন কুমিল্লা ব্যাটার ফ্যাফ ডু প্লেসিস। চট্টগ্রামের বিপক্ষে তিনি ৫৫ বলে ৮৩ রানের একটি ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেন।

ক্যামেরুন ডেলপোর্টঃ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষেই বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে দ্রুততম অর্ধশত রান করেন ব্যাটার ক্যামেরুন ডেলপোর্ট।তিন চট্টগ্রামের বিপক্ষে ২৩ বলে ৫১ রানের একটি মার কাটারি ইনিংস খেলেন।

সাকিব আল হাসানঃ বিপিএলের মিরপুর পর্বে ফরচুন বরিশাল অধিনায়ক ব্যাট হাতে অনেকটাই ম্লান ছিলেন। তবে, চট্টগ্রাম পর্বে ব্যাট হাতে দারুণ ফর্মে ফিরেছেন সাকিব। বরিশালের হয়ে দুটি ম্যাচে ব্যাক টু ব্যাক, ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছেন মিস্টার সুপারস্টার।

চট্টগ্রামই দেশের টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের আদর্শ ভেন্যু ?
সাকিব আল হাসান

সাকিব খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ২৭ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলেন। এরপরের ম্যাচেই তিনি ৩১ বলে ৫০ রানের একটি ইনিংস খেলেন। চট্টগ্রামের এই স্পোর্টিং উইকেটের সুবাদেই নিজের হারানো ব্যাটিং ফর্ম আবারো ফিরে পেয়েছেন মিস্টার অলরাউন্ডার।

এছাড়াও,  কুমিল্লার বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৪১ বলে ৭০ রানের অপরাজিত ম্যাচজয়ী ইনিংসটিও ছিলো চোখে পড়ার মতোই।

বিপিএলের ঢাকা পর্বে ব্যাটার সাকিবের মোট রান ছিলো ৩ ম্যাচে ৩৬, যেখানে তার স্ট্রাইক রেট ছিলো ৭৫.৭৬।

চট্টগ্রামই দেশের টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের আদর্শ ভেন্যু ?
মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী

তবে, চট্টগ্রাম পর্বে সাকিবের মোট রান ১০০, যেখানে তার স্ট্রাইক রেট ১৫৪.৩৮।

বিপিএলের মিরপুর পর্বে তামিম ইকবাল ছক্কা হাকিয়েছিলেন মাত্র ২টি। তবে, চট্টগ্রাম পর্বে তামিম ছক্কা হাকিয়েছেন মোট ৭টি।

এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, মিরপুরের পিচ থেকে চট্টগ্রামের পিচের পার্থক্য।

বিপিএলের এই চট্টগ্রাম পর্ব শুধু ব্যাটারদেরই কনফিডেন্স বাড়াতে সাহায্য করেনি বরং এ পর্বে পেসাররাও ফিরেছেন নিজেদের বোলিং ছন্দে। পুরো চট্টগ্রাম পর্বে পেসাররা নিয়েছেন ৮ ম্যাচে মোট ৬৫ টি উইকেট।

এ পর্বের লাইমলাইট কেড়ে নিয়েছেন চট্টগ্রামের মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী এবং ফরচুন বরিশালের মেহেদী হাসান রানা। এ পর্বের ৩ ম্যাচে মেহেদী হাসান রানা নিয়েছেন ৬ টি উইকেট এবং মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ১টি হ্যাট্রিকসহ নিয়েছেন ৭টি উইকেট।

বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের এ পরিসংখ্যানই বলে দেয়, টি টোয়েন্টির মতো অ্যাকশন প্যাকড ক্রিকেটের জন্য দেশের সবচেয়ে উপযুক্ত ভেন্যু, চট্টগ্রামের এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামই।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment