ক্রিকেটের নিয়ম নিয়ম নিয়ে কথা বলবো আজ। সেই প্রসঙ্গেই আসবে এ খেলার অত্যাবশ্যকীয় সরঞ্জামাদি যেমন – ক্রিকেটের মাঠ, পিচ এবং উইকেট, ব্যাট, বল ইত্যাদির নিয়মের কথায়।
ক্রিকেটকে বলা হয় গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। প্রত্যেকটি খেলার মতো ক্রিকেটেও রয়েছে বিভিন্ন নিয়মাবলি এবং বিভিন্ন সরঞ্জামাদির নির্দিষ্ট মাপ যা ক্রিকেট খেলাকে করেছে আরো বেশি মাধুর্যময় এবং উত্তেজনাকর। দিনে দিনে যেমন পরিবর্তন এসেছে ক্রিকেট খেলার ভঙ্গিতে ঠিক তেমনি পরিবর্তন এসেছে এ খেলার বিভিন্ন নিয়মাবলিতে।
ক্রিকেটের নিয়ম – মাঠ, পিচ এবং উইকেট, ব্যাট, বল ইত্যাদির নিয়ম :
ক্রিকেটের মাঠ [ Cricket field ]:
একটি ক্রিকেট ম্যাচ পরিচালনা করার জন্য সর্বপ্রথম দরকার একটি ক্রিকেট মাঠ। ক্রিকেট মাঠ একটি বিশাল বিশাল বৃত্তাকার অথবা ডিম্বাকার ঘাসবহুল জমিনের উপর নির্মিত হয়। যদিও মাঠে আকারের বেলায় সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই তবেএটির ব্যাস সাধারণত ৪৫০ ফুট (১৩৭ মি) থেকে ৫০০ফুট (১৫০ মি) এর মধ্যে হয়ে থাকে। অধিকাংশ মাঠেই দড়ি দিয়ে মাঠের পরিসীমা ঘেরা দেয়া থাকে যা সীমানা নামে পরিচিত।

ক্রিকেটের পিচ [ The pitch ]:
মাঠের কেন্দ্রটি ২২ গজ (২০ মিটার) দৈর্ঘ্য এবং ১০ ফুট (৩.০ মিটার) প্রস্থের সাথে চতুর্ভুজাকার আকৃতির হতে হবে। মাঠ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পিচ প্রস্তুত ও নির্বাচন করবে। কিন্তু সেই পিচ খেলায় একবারই ব্যবহার করা হবে। পিচ তখন আম্পায়ারদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আম্পায়াররা খেলার উপযোগী পিচ নির্বাচন করবেন। পিচ অনুপযুক্ত মনে করলে দুই অধিনায়কের সম্মতিতেই তারা পিচ পরিবর্তন করবে। পেশাদার ক্রিকেটে সবসময় পীচ ঘাস থাকবে। কিন্তু নন-টার্ফ পিচের ক্ষেত্রে, কৃত্রিম আবরণের দৈর্ঘ্য কমপক্ষে ৫৮ ফুট (১৮ মিটার) এবং প্রস্থ ৬ ফুট (১.৮ মিটার) হওয়া উচিত।

ক্রিকেটের উইকেট [ Cricket Wicket ]:
বেশিরভাগ সময় উইকেটটি পিচের শেষে দুটি সেটের একটি হিসাবে তিনটি স্ট্যাম্প এবং দুটি বেইল সহ স্থাপন করা হয়। প্রতিটি কাঠের স্ট্যাম্প দৈর্ঘ্যে ২৮ ইঞ্চি (৭১ সেমি) হবে। ব্যাটিং ক্রিজে সমান দূরত্বে স্ট্যাম্প স্থাপন করা উচিত। এর প্রস্থ ৯ ইঞ্চি (২৩ সেমি) হবে। দুটি কাঠের বেইল স্ট্যাম্পের উপরে থাকবে। বেইলস স্ট্যাম্পের উপরে ০.৫ ইঞ্চি (১.৩ সেমি) এর বেশি হবে না। জামিনের দৈর্ঘ্য হবে ৪৫/১৬ ইঞ্চি (১০.৯৫ সেমি)। তবে টিনএজ ক্রিকেটে উইকেটের দৈর্ঘ্য এবং বেইল আলাদা। বাতাসের কারণে বেইল পড়ে গেলে দুই আম্পায়ার জামিন ছাড়াই খেলতে পারবেন।

বিভিন্ন সময়ে খেলোয়াড়েরা ক্রিকেট ব্যাটের আকার আকৃতি ও উপাদানের পরিবর্তন করে ক্রিকেটে অতিরিক্ত সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছে। ফলে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি ক্রিকেট ব্যাট সংক্রান্ত বেশ কিছু আইন প্রণয়ন করে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের অক্টোবরে আইসিসি ক্রিকেট ব্যাট সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়ন করে।
এখানে ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে এসব আইনগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো-
– ক্রিকেট আইনের ৫ নম্বর আইনে বলা হয়েছে, ক্রিকেট ব্যাটের দৈর্ঘ্য ৩৮ ইঞ্চির (৯৬৫ মিলিমিটার) বেশি হবে না। এছাড়া ব্যাট চওড়ায় সর্বোচ্চ ৪.২৫ ইঞ্চি (১০৮ মিলিমিটার) এবং পুরুত্বের দিক থেকে সর্বোচ্চ ২.৬৪ ইঞ্চি (৬৭ মিলিমিটার) পর্যন্ত হতে হবে।
– সাধারণত ক্রিকেট ব্যাটের ওজন ২.৭ পাউন্ড থেকে ৩ পাউন্ড (১.২ কিলোগ্রাম থেকে ১.৪ কিলোগ্রাম) পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে এর ওজন নিয়ে নির্দিষ্ট কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
– ২০১৭ সালের আইনে ব্যাটের আকৃতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন করে দেয়া হয়। ব্যাটের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, পুরুত্ব নিয়ে আইন আরও কঠোর করা হয়।
– মাঠে খেলা চলাকালীন যেকোন সময়ে আম্পায়ার ব্যাটের আকার-আকৃতি চেক করতে পারবে।
ক্রিকেটের বল [ Cricket ball ]:
ক্রিকেট বলগুলি সাধারণত তিনটি স্বতন্ত্র উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। কর্ক, দড়ি ও চামড়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বলের মূল অংশটি কর্ক দিয়ে তৈরি। তারপরে সেই কর্কটিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য দড়ি দিয়ে বেশ কয়েকবার শক্তভাবে আবদ্ধ করা হয়।
কর্ক এবং দড়ি গুলো পরে চামড়াতে আবদ্ধ করা হয়। যা সাধারণত লাল বা সাদা রঙয়ের হয়ে থাকে। বলে চামড়ার ব্যবহারটি সাধারণত ক্রিকেট খেলার উপর নির্ভর হয়ে থাকে। চামড়ার কেসটি দুই বা চার পিস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ক্রিকেট বল অত্যান্ত শক্তিশালী সরঞ্জাম। তাই একজন ব্যাটসম্যান নিজের আত্মরক্ষার্থে ক্রিকেট মাঠে ব্যবহার করে থাকে প্যাড, আর্ম গার্ডস এবং হেলমেট।

বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট বল প্রস্তুতকারকরা হলেন, অস্ট্রেলিয়ান সংস্থা কোকাবু্রা। সমস্ত ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের পাশাপাশি বেশিরভাগ টেস্ট ম্যাচেও ব্যবহৃত হয় কোকাবুরা বলগুলো।
অন্যদিকে ডিউকস বল তৈরি করা হয় ইংল্যান্ডে। যা ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ডে খেলা টেস্ট ম্যাচে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সেইসঙ্গে ভারতে বানানো হয় এসজি ব্রান্ডের ক্রিকেট বল। ভারতে খেলা টেস্ট ম্যাচগুলোতে এই এসজি বলই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: