সাইলেন্ট কিলারের নীরবতা [ Silence of the Silent Killer ] !

সাইলেন্ট কিলারের নীরবতা [ Silence of the Silent Killer ] !

বরাবরই মাহমুদউল্লাহকে বলা হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাইলেন্ট কিলার। সাইলেন্ট কিলার, বাংলাদেশের হয়ে এমন অসংখ্য ম্যাচ জিতিয়েছেন  যে ম্যাচগুলোতে হয়ত বাংলাদেশের জেতার তেমন  সম্ভাবনা ছিলো না। দলের বিপদে এক পথ প্রদর্শক কান্ডারি হয়েই বাংলাদেশকে নিজের সেরা পারফর্মেন্স দিয়ে গেছেন সাইলেন্ট কিলার।

মাহমুদউল্লাহ-রিয়াদ [ Mahmudullah Riyad ] কে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয় ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তার অভিষেক ম্যাচেই নিজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন মাহমুদউল্লাহ।  সে ম্যাচে , তিনি ব্যাট হাতে ৩৬ রান করেন এবং বল হাতে ২ উইকেট নেন। যদিও, সে ম্যাচটি শ্রীলঙ্কা ৩৯ রানে জয়লাভ করে।

২০০৭ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলেও ছিলেন তিনি। এরপরে, দলের প্রয়োজনে মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করে এবং স্পিন বোলিং করে দলের এক গুরুত্বপুর্ণ সদস্য হিসেবে নিজেকে দিনের পর দিন প্রতিষ্ঠিত করেছেন রিয়াদ। বাংলাদেশের হয়ে এমন স্মরণীয় জয় এনে দিয়েছেন রিয়াদ যা দেশের ক্রিকেট প্রেমীদের স্মৃতির মণিকোঠায় চিরকাল থাকবে।

বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড বধঃ ২০১১ সালে ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ এবং ২০১৫ সালের অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে পরপর দুইবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়লাভ করে বাংলাদেশ। এ দুইজয়েই মাহমুদউল্লাহ-রিয়াদ খুবইন গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এ দুই ঐতিহাসিক জয়েই বাংলাদেশের কান্ডারি ছিলেন মাহমুদউল্লাহ-রিয়াদ।

সাইলেন্ট কিলারের নীরবতা !
২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর রিয়াদের উল্লাস

২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে টস জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে, বাংলাদেশ স্পিনারদের বোলিং নৈপুণ্যে ইংল্যান্ডকে ২২৫ রানের মধ্যে আটকে ফেলে বাংলাদেশ।

২২৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে , শুরু থেকেই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং ইম্রুল কায়েসের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে জয়ের সুবাতাস পেতে থাকে বাংলাদেশ। দলীয় ১৬৯ রানের মধ্যেই ৮ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং জয় থেকে দূরে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। তবে, উইকেটে তখনও টিকে ছিলো মাহমুদউল্লাহ-রিয়াদ এবং শফিউল ইসলাম। এরপর, মাহমুদউল্লাহ-রিয়াদ এবং শফিউল ইসলামের ৫৮ রানের অবিশ্বাস্য জুটিতে এক ঐতিহাসিক জয় পায় বাংলাদেশ।

সাইলেন্ট কিলারের নীরবতা !

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের প্রধান কান্ডারি ছিলেন মাহমুদউল্লাহ-রিয়াদ। সে ম্যাচে ১০৩ রানের এক ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ-রিয়াদ। মাহমুদউল্লাহ-রিয়াদের সে ইনিংসই বিশ্বকাপের মঞ্চে কোনো বাংলাদেশির হয়ে প্রথম সেঞ্চুরি ছিলো। সে ম্যাচে, মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত ইনিংসের উপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ ২৭৬ রানের লড়াকু পুঁজি পায় এবং ম্যাচটি ১৫ রানে জয়লাভ করে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টারফাইনালে খেলার সুযোগ পায়।

সাইলেন্ট কিলারের নীরবতা !
২০১৫ বিশ্বকাপে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর, রিয়াদ

২০১৩ উইন্ডিজ সিরিজঃ ২০১৩ সালে উইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়লাভ করে বাংলাদেশ।এর আগেও ২০০৯ সালে উইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেলেও সেবার উইন্ডিজ দ্বিতীয় সারির দলের সঙ্গে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ।

তবে, ২০১৩ সালে, ফর্মের তুঙ্গে থাকা তারকাখচিত উইন্ডিজ দলের বিপক্ষে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।সে সিরিজের পঞ্চম ম্যাচে এক অঘোষিত ফাইনালে উইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন মাহমুদউল্লাহ-রিয়াদ। এছাড়াও, সে সিরিজে বাংলাদেশের অন্যতম ধারাবাহিক ব্যাটার ছিলে মাহমুদউল্লাহ-রিয়াদ।

২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিঃ ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথমবারের মতো কোনো বৈশ্বিক আসরের সেমিফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ দল। সেবার, নিউমাহমুদউল্লাহ-রিয়াদজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ডুবতে থাকা নৌকা পাড় করান  সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহ-রিয়াদ। তাদের জোড়া সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়লাভ করে সেমিফানালের দিকে অগ্রসর হয় বাংলাদেশ। সে ম্যাচে, ১০২ রানী অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ-রিয়াদ।

সাইলেন্ট কিলারের নীরবতা !
২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর রিয়াদ

২০১৮ নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার মাটিতে , তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের বুক চিতিয়ে লড়াইয়ের কথা দেশের সকল ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এখনো গেথে আছে। নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাহবমুদউল্লাহ রিয়াদের বীরত্বসূচক ফিনশিং কিংবা ২০১৬ সালে পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠার ক্ষেত্রে মাহমুদউল্লাহ-রিয়াদের বীরত্বসুচক ফিনিশিংসহ এমন অনেক ইনিংস বছরের পর বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ-রিয়াদ।

সম্প্রতি, নিজের চেনা ছন্দে নেই রিয়াদ। তার কম স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং এবং ফিল্ডিংয়ের সময় তার হাতে ক্যাচ মিসের কারণে বেশ কিছু ম্যাচ বাংলাদেশ হেরেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ টি টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক তিনি। ২০২১ বিশ্বকাপে তার নেতৃত্বেই এক চরম ব্যর্থতাময় পারফর্মেন্স করে বাংলাদেশ।

এছাড়াও, টি টোয়েন্টি বিশকাপের কিছুদিন আগেই বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে তামিম ইকবালের নিজের নাম প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে মাহমুদউল্লাহ-রিয়াদ জড়িত ছিলেন, তা অনেকদিন ধরেই গুঞ্জন ছিলো ক্রিকেট পাড়ায়।

২০২১ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে ম্যাচ ফিনিশ করে না আসা কিংবা সদ্য সমাপ্ত আফগানিস্তানের বিপক্ষে  ওয়ানডে সিরিজেও ব্যাট হাতে মলিন ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে মোট ৭৯ বল খেলে মাত্র ১টি বাউন্ডারি হাকিয়েছেন রিয়াদ। এছাড়াও, তৃতীয় ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের সেঞ্চুরিয়ন রহমানুল্লাহ গুরবাজের ক্যাচও ছেড়েছেন রিয়াদ। সব মিলিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্ষেত্রে প্রথম এবং প্রধান যে সমস্যা চোখে পড়ার মতো, তা হলো তার ফিটনেস।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন টি টোয়েন্টি সিরিজেও বাংলাদেশের হয়ে অধিনায়কত্ব করবেন রিয়াদ। এখন প্রশ্নের  বিষয় হলো সে সিরিজে কি চিরচেনা রূপ আবার দেখাতে পারবেন রিয়াদ ?

 

সাইলেন্ট কিলারের নীরবতা !

 

আরও পড়ুন:

Leave a Comment