শচীন তেন্ডুলকর [ Sachin Tendulkar ] : ২০ জানুয়ারী ১৯৮৭, মুম্বাইয়ের ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়ার সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এক প্রদর্শনী ম্যাচে ইমরান খাঁনের পাকিস্তানের হয়ে পরিবর্তিত ফিল্ডার হিসেবে মাঠে নামা, এরপর ১৯৮৭ তে ভারত – ইংল্যান্ড ম্যাচে বল বয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
২৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৮: হ্যারিস শিল্ড ট্রফি তে সেইন্ট জেভিয়ার্স হাই স্কুলের হয়ে শ্রদ্ধাশ্রম বিদ্যা মন্দির ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বিপক্ষে দুই বন্ধু শচীন তেন্ডুলকর এবং বিনোদ কাম্বলি গড়েন ৬৬৪* রানের অবিশ্বাস্য এক জুটি৷ শচীন তেন্ডুলকর করেন ৩২৬* রান আর বিনোদ কাম্বলি করেন ৩৪৯* রান। যেটি এখন পর্যন্ত যে কোনো ধরণের ক্রিকেটে, যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। পুরো টুর্নামেন্টে শচীন তেন্ডুলকর করেন ১০০০ এর অধিক রান।
এরপরের গল্পটা শুরু ১৬ বছর বয়সে ১৯৮৯ সালের ১৫ই নভেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে করাচিতে অভিষেক এর মাধ্যমে। এরপর একের পর এক রেকর্ড গড়েছেন, ভেঙেছেন পুরাতন অজস্র রেকর্ড। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে বইয়ে গেছেন রানের বন্যা। বলা হয়ে থাকে ব্র্যাডম্যানের পর সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান। করাচি থেকে ওয়াংখেড়ে খেলেছিলেন রেকর্ড ২০০ টেস্ট।
ওয়ানডে ক্রিকেটে এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটসম্যানের নাম শচীন তেন্ডুলকর । ১৯৯৮ তে ৬৬ গড়ে ৩৩ ইনিংসে করেন ১৮৯৪ রান৷ এক বছরে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডও তার দখলে। সে বছরই ওয়ানডে তে রেকর্ড ৯ টি সেঞ্চুরি হাঁকান মাস্টার ব্লাস্টার।
একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে খেলেছেন ৬ টি ওয়ানডে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের মালিকও তিনি। বিশ্বকাপে ৪৫ ম্যাচে ৪৪ ইনিংসে ৫৬ গড়ে করেন ২২৭৮ রান। বিশ্বকাপে স্ট্রাইক রেটটাও বেশ দারুণ, প্রায় ৯০। ১৯৯৬ এবং ২০০৩ বিশ্বকাপে ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ২০১১ সালে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিলকারত্মে দিলশানের সাথে পার্থক্য ছিলো মাত্র ১৮ রানের।
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিকও শচীন তেন্ডুলকর। তবে ২০১৯ বিশ্বকাপে রেকর্ড ৫ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে স্বদেশী ওপেনার রোহিত শার্মাও এখন শচীনের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন। বিশ্বকাপে দুজনেই যৌথভাবে ৬ টি করে সেঞ্চুরি হাঁকান। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ অর্ধশতকও শচীনের দখলে। বিশ্বকাপে শচীনের অর্ধশতক ১৫ টি।
বিশ্বকাপে আছে ২১ টি ৫০+ ইনিংস৷ যেখানে ২য় সর্বোচ্চ সাঙ্গাকারা আর সাকিবের আছে ১২ টি করে ৫০+ ইনিংস৷ এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানও তার দখলে। ২০০৩ বিশ্বকাপে করেন ৬৭৩ রান। যা ছিলো প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে ৬০০ এর অধিক রান।
ওয়ানডে ক্রিকেটে সেঞ্চুরির মতো সর্বোচ্চ অর্ধশতকও তার দখলে। ৯৬ বার অর্ধশতক হাঁকান তিনি। ৫০+ ইনিংস আছে ১৪৫ টি। ওয়ানডের মতো টেস্ট ক্রিকেটেও সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির সাথে সর্বোচ্চ ফিফটিও তার দখলে। ফিফটি করেন ৬৮ বার। আর ৫০+ ইনিংস আছে ১১৯ টি।
নির্দিষ্ট এক বিশ্বকাপে দলের পক্ষে নির্দিষ্ট ইনিংসে সর্বোচ্চ রান শচীনের, ২০০৩ বিশ্বকাপে শচীন এমনটি করেছেন ৬ বার। নির্দিষ্ট এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস যৌথভাবে শচীন এবং সাকিবের। শচীন ২০০৩ বিশ্বকাপে ১১ ইনিংসে খেলেন ৭ টি পঞ্চাশোর্ধ।
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ বাউন্ডারিও তার দখলে। বিশ্বকাপে মেরেছেন ২৪১ টি চার। যেখানে দেড়শো চার মারার কৃতিত্বও নেই কারো। ২৭ ছক্কা আর ২৪১ চার নিয়ে বিশ্বকাপে সবচাইতে বেশী বাউন্ডারি এবং ওভার বাউন্ডারি মারা ব্যাটসম্যান শচীন তেন্ডুলকর।
টেস্ট ক্রিকেটে ও সর্বোচ্চ বাউন্ডারি সংখ্যা তার দখলে, হাঁকিয়েছেন ২০৫৮ টি। চার এবং ছক্কা দুটো মিলিয়েও সবার উপরে শচীন-টেন্ডুলকার, সংখ্যাটা ৩২৭। ওয়ানডে ক্রিকেটেও সর্বোচ্চ বাউন্ডারি হাঁকানোর রেকর্ড তার। ওয়ানডে তে তার বাউন্ডারি সংখ্যা ২০১৬ টি। যেখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সনাৎ জয়সুরিয়ার বাউন্ডারি ২০১৬ টি।
ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশী বল মোকাবিলা করা ব্যাটসম্যানও তিনি। যেখানে কারো নেই বিশ হাজার সেখানে তিনি মোকাবিলা করেছেন প্রায় সাড়ে ২১ হাজার বল৷ বিশ্বকাপেও সর্বোচ্চ বল খেলেন তিনি, ২৫৬০ বল।
টেস্ট ক্রিকেটে মোকাবেলা করেছেন প্রায় সাড়ে ২৯ হাজার বল। যেখানে তিনি আছেন দ্বিতীয় স্থানে, প্রথমে আছেন স্বদেশী ব্যাটসম্যান রাহুল দ্রাবিড়। তার মোকাবেলা কর বল ৩১ হাজারের অধিক।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীনের নার্ভাস নাইনটিজ সংখ্যা ২৮ টি৷ যেটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ। ওয়ানডেতেও সর্বোচ্চ ১৮ টি নার্ভাস নাইনটিজ এর রেকর্ডও তার৷ টেস্টে ১০ টি নার্ভাস নাইনটিজ, যেটিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ।
একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ১৫০০০ এর অধিক রান এবং ১৫০ শিকারের রেকর্ড। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩০ হাজার এর অধিক রান এবং ২০০ এর বেশী উইকেট নেওয়া একমাত্র অলরাউন্ডার শচীন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব ফরম্যাট মিলিয়ে সর্বোচ্চ ম্যান অব দ্য সিরিজ পুরষ্কার এর রেকর্ডও তার দখলে। জিতেছেন ২০ বার৷ ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ১৫ টি ম্যান অব দ্য সিরিজ পুরষ্কার জয়ের রেকর্ড শচীনের।ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৬২ বার হয়েছেন ম্যাচ। টেস্ট এবং ওয়ানডে মিলিয়ে মোট ম্যান অব দ্য ম্যাচ ৭৬ টি, যেটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ।
১৯৮০ এর দশক থেকে ২০১০ এর দশক, মোট ৪ টি ভিন্ন ভিন্ন দশকে মাঠে নেমেছেন এই ব্যাটিং জিনিয়াস। সময়ের হিসেবে সবচাইতে লম্বা ক্রিকেট ক্যারিয়ারের মালিক শচীন-টেন্ডুলকার।তার ক্যারিয়ার ২২ বছর ৯১ দিনে।
২২ বছরের বেশী সময়ের ক্যারিয়ারে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ২০০ টেস্ট খেলার কৃতিত্ব অর্জন করেন শচীন-টেন্ডুলকার। ওয়ানডে ক্রিকেটেও সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা ক্রিকেটার তিনি। ম্যাচ সংখ্যা ৪৬৩ টি। মোট ক্যারিয়ার ম্যাচ ৬৬৪ টি। যেটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের মালিক শচীন টেন্ডুলকার৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার রান ৩৪৩৫৮। যেখানে ২য় তে থাকার কুমার সাঙ্গাকারার রান ২৮ হাজার। পার্থক্য প্রায় সাড়ে ৬ হাজার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে স্পর্শ করেন ১০০ টি সেঞ্চুরির মাইলফলক। যেখানে ৭৫ টিও নেই কারো। ওয়ানডে তে তার করা ৪৯ টি সেঞ্চুরি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি। আর একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে করেন ৫০ এর অধিক টেস্ট সেঞ্চুরি। টেস্টে তার সেঞ্চুরি ৫১ টি। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিও আসে তার ব্যাট থেকে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গোলালিয়রে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচে এই কীর্তি গড়েন তিনি।
টেস্ট এবং ওয়ানডেতে প্রথম ১২ হাজার, ১৩ হাজার, ১৪ হাজার, ১৫ হাজার এবং ওয়ানডে তে ১৬ হাজার, ১৭ হাজার এবং ১৮ হাজার রান করা প্রথম ব্যাটসম্যান শচীন তেন্ডুলকর। এছাড়া ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি টোয়েন্টির সবচাইতে সরগরম আসর আইপিএলে একবার হয়েছেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আছে ১ টি সেঞ্চুরি। ৩৫ গড়ে আছে প্রায় আড়াই হাজার রান।