বাদ পড়েছিলেন দল থেকে, বাবার হার্ট অ্যাটাকে দিশেহারা—একটি ‘ডাক’ বদলে দিল শেফালি বর্মার ভাগ্য

২০২৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের কয়েক মাস আগেও হয়তো কেউ কল্পনা করতে পারেনি যে শেফালি বর্মা হয়ে উঠবেন ভারতের বিশ্বজয়ের নায়িকা। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পেরিয়ে তিনি যেন নতুন জন্ম নিয়েছেন—একটি ফোনকল, একটি ‘ডাক’ বদলে দিয়েছে তার ক্রিকেটজীবনের মোড়।

বিশ্বকাপ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে ভারতীয় নারী ক্রিকেট দল লিখে ফেলেছে গৌরবময় ইতিহাস। দীর্ঘ দুই দশকের অপেক্ষা, বারবার ব্যর্থতা ও অশ্রুসিক্ত দিন পেরিয়ে অবশেষে ভারতের মেয়েরা ঘরে তুলেছে প্রথম আইসিসি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ ট্রফি। সারা দেশে আনন্দের জোয়ার, উড়ছে জাতীয় পতাকা, আর জনতার মুখে একটাই নাম—শেফালি বর্মা।

কিন্তু এই আলোয় ভাসার পেছনে ছিল এক কঠিন অন্ধকার সময়।
মাত্র কয়েক মাস আগেই ধারাবাহিক খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন শেফালি। ঠিক সেই সময়েই নেমে আসে ব্যক্তিগত দুঃসংবাদ—তার বাবা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। এক সাক্ষাৎকারে শেফালি বলেন,

“আমি বিষয়টা তখন প্রকাশ করতে চাইনি। আমাকে বাদ দেওয়ার দুই দিন আগেই বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। তিনি তখনও হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এক সপ্তাহ পর আমি তাঁকে সব জানাই।”

মাত্র ১৫ বছর বয়সেই ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে অভিষেক হয় শেফালির। ২০২০ সালের শুরুর দিকে তিনি উঠে আসেন আইসিসি টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে। কিন্তু এরপর আসে ব্যর্থতার ধাক্কা—রান নেই, আত্মবিশ্বাস হারানো, আর শেষে দল থেকে বাদ। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে তো দূরের কথা, ব্যাকআপ তালিকাতেও জায়গা হয়নি তার।

তবুও ভাগ্যের খেলায় পরিবর্তন আসে হঠাৎ করেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে লিগের চূড়ান্ত পর্বে প্রতীকা রাওয়াল চোট পেলে (গোড়ালিতে ইনজুরি), সুযোগ চলে আসে শেফালির হাতে। আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে তিনি লিখে ফেলেন এক নতুন অধ্যায়।

বিশ্বকাপ ফাইনালে তার ৭৮ বলে ৮৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস ভারতের জয়ে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। নিখুঁত ব্যাটিং, দারুণ স্ট্রোকপ্লে আর অবিচল মানসিকতা তাকে এনে দেয় ফাইনালের প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ খেতাব।

তার এই অসাধারণ পারফরম্যান্সের পর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ঘোষণা করেছে বিশাল পুরস্কার।

পুরস্কার বিবরণপরিমাণঘোষণা কর্তৃপক্ষ
নারী বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের জন্য নগদ পুরস্কার₹৫১ কোটি টাকাভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)

শেফালি বর্মা আজ শুধু একজন ক্রিকেটার নন—তিনি ভারতের নারী ক্রিকেটে অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস ও পুনর্জাগরণের প্রতীক। তাঁর গল্প যেন মনে করিয়ে দেয়, জীবনে যতই অন্ধকার নেমে আসুক, একটিমাত্র সুযোগই আলো জ্বালিয়ে দিতে পারে সাফল্যের দিগন্তে।

Leave a Comment