বিশ্বকাপ বা যে কোনো বড় ক্রীড়াযুদ্ধে, দেশের কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের মাঠে উপস্থিতি সাধারণত প্রত্যাশিত হয়। ক্রিকেট বা ফুটবল—এধরনের আন্তর্জাতিক ইভেন্টে, রথী-মহারথীদের সমর্থন সাধারণত খেলোয়াড়দের জন্য প্রেরণা যোগায়। কিন্তু এবারের নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে সে রকম কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার দল ভারতের কাছে ৫২ রানে হেরে যাওয়ার পর, সেখানে ছিলেন না দেশের বড় কোনো ক্রিকেট তারকা, এমনকি কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্স, জ্যাক ক্যালিস কিংবা অন্য কোনো প্রোটিয়া ক্রিকেটারও।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিশিষ্ট অভিনেত্রী, লেখক এবং সঞ্চালক থানজা ভুর এই ঘটনাতে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। এক ভিডিওতে তিনি বলেছিলেন, “সাবেক ক্রিকেটাররা, যারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভালোবাসে, পুরুষ ক্রিকেটাররা—সবাই কোথায়? তারা কি মনে করেছিল, এটা হাই-প্রোফাইল ইভেন্ট নয়?”
বিশ্বকাপের ফাইনালটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল নাভি মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে। এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারতীয় খেলোয়াড়দের সমর্থন জানাতে উপস্থিত ছিলেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক রোহিত শর্মা, কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার, সুনীল গাভাস্কার, ভিভিএস লক্ষ্মণসহ একাধিক ক্রিকেট তারকা। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো অভিজ্ঞানী তারকা সেখানে ছিলেন না। এ ব্যাপারে থানজা আরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন, “এটা খুবই হতাশাজনক যে, ক্রীড়ামন্ত্রীও সেখানে উপস্থিত হননি। তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফলাফল ছিল, তারা ভালো খেলছিল। কিন্তু গ্যালারিতে তাদের সমর্থন দেয়ার কেউ ছিল না, এমনকি আমরা কি হারার জন্যই তাদের কাছে আগেভাগেই বার্তা পৌঁছেছিল?”
দক্ষিণ আফ্রিকার এই লেখক ভারতীয় মেয়েদের অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি। তিনি বলেন, “ভারত, তোমরা বিশ্বকাপ জিতেছ! তোমরা এর সম্পূর্ণ প্রাপ্য। তোমরা খেলায় বাঁচো, নিশ্বাস নাও এবং বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছ—এটা তোমাদের অর্জন।”
ফাইনালে, ভারতীয় দল ২৯৮ রান সংগ্রহ করে প্রোটিয়া মেয়েদের সামনে ২৯৯ রানের লক্ষ্য রেখে। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক লরা উলভার্ট এক সেঞ্চুরির সঙ্গে ব্যক্তিগত লড়াই করেও দলকে জয় এনে দিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তারা ২৪৬ রানে অলআউট হয়ে ৫২ রানে পরাজিত হয়।
এটি ছিল ভারতের প্রথম বৈশ্বিক ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়, যেখানে তারা ফাইনালে অসাধারণ ব্যাটিং করে নিজেদের জয় নিশ্চিত করে। শোচনীয়ভাবে হেরে গিয়েও দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়রা ভারতীয় দলের সদয় সমর্থন পেয়েছেন, যেখানে স্মৃতি মান্দানা, জেমিমাহ রদ্রিগেজ, রাধা যাদব ও দিপ্তী শর্মা তাদের সান্ত্বনা প্রদান করেছেন।
এভাবে, এই টুর্নামেন্টটি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য হতাশার হলেও ভারতীয় মেয়েদের জন্য ছিল ঐতিহাসিক।
