মোস্ট আন্ডাররেটেড পেসার অব লাস্ট ডেকেড [ Most underrated pacer of last decade ]

২০১০ থেকে ২০১৯ এই এক দশক সেরা টেস্ট স্কোয়াড, সেরা টেস্ট বোলার, সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান, সেরা পেসার, সেরা টেস্ট স্পিনার, সেরা অলরাউন্ডার অনেক কিছুই তৈরি করেছিলেন ক্রিকেট বিশ্লেষক থেকে শুরু ক্রিকেট ভক্তরা এবং বিভিন্ন সব ক্রিকেট ভিত্তিক ওয়েব সাইট গুলো। আইসিসিও ঘোষণা করেছিলো পুরষ্কার, একাদশ, সেরা ক্রিকেটার। প্রায় প্রতিটা স্কোয়াডেই অনেকেই জায়গা পেয়েছেন অনেকেই পাননি।

তবে গত দশকের যদি ‘মোস্ট আন্ডাররেটেড ক্রিকেটার’ বা ‘মোস্ট আন্ডাররেটেড বোলার’ এর অ্যাওয়ার্ড কোনো পুরস্কার থাকলে সেই পুরষ্কার নিশ্চয়ই কিউই প্লেয়ার নিল ওয়াগনার [ Neil Wagner ] এর কাছেই যেতো৷ গেলো দশক জুড়ে বল হাতে আধিপত্য দেখানোর পরেও সেভাবে বিবেচনা হয়নি তাকে। গত দশকে আসলেই কেমন ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এই কিউই বাঁ হাতি পেসার?

বছর জুড়ে উইকেট ক্ষুধায় ক্ষুধার্ত থাকা দুই পেসার বোল্ট এবং সাউথির সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে মূলত দলের ৩য় পেসার হিসেবে দলে জায়গা করে নিয়ে একই সাথে ফর্ম ধরে রেখে লড়াই করে যাওয়াটা অনেক বড় ব্যাপার যে কোনো পেসারের জন্য।

এই কাজটিই ২০১২ থেকে একাগ্র চিত্তে করে আসছেন নিয়মিতই। দুই শতাধিক টেস্ট উইকেট গত দশকে তাকে প্রমাণের জন্য যথেষ্টই হতে পারে। কিন্তু ওয়াগনারকে নিয়ে আলোচনা হয়না সেভাবে। অন্যান্য পেসারদের মতো এতোটা হাইপও নেই। পার্শ্বনায়কের ভূমিকায় পারফর্ম করে যান সারা বছর জুড়েই।

বোলিংয়ে বৈচিত্রের পাশাপাশি সবচাইতে বেশী উপভোগ্য যে জিনিসটি সেটি হলো আগ্রাসন। কিউইরা জাতি হিসেবেই ঠান্ডা মেজাজের৷ তবে তিনি তো আর জন্মসূত্রে কিউই নন। জন্মসূত্রে একজন আফ্রিকান। তাই আফ্রিকানদের হার না মানা সাহসিকতা তার মাঝে থাকাটাই স্বাভাবিক।

মোস্ট আন্ডাররেটেড পেসার অব লাস্ট ডেকেড [ Most underrated pacer of last decade ]

খেলার মাঠে প্রতিপক্ষকে একটুও ছাড় দিতে রাজি ন, হোক সেটা বলের বাউন্সারে আর হোক সেটা স্লেজিংয়ের বাউন্সারে। একের পর এক বডি লাইনে শর্ট বল আর বাউন্সার দিতেই থাকেন, সাথে প্রায় প্রতিটি ডেলিভারির পর স্লেজিং সব দিক দিয়েই কোনঠাসা হয়ে যান ব্যাটসম্যান।

গত দশকে টেস্ট ক্রিকেটে ২০০ এর অধিক উইকেট আছে ১৫ জন বোলারের। যাদের অ্যান্ডারসন, ব্রড, লায়ন, হেরাথ, আশ্বিন, স্টেইন, বোল্ট, সাউথি, মরকেল, স্টার্ক, ঈশান্ত, ফিল্যান্ডার, জাদেজা এবং ইয়াসির শাহ। কম বেশী এদের সবারকে নিয়ে হার হামেশাই সরগরম আলোচনা চলে সবাইকে নিয়েই। তুলনামূলক কম আলোচিত হলেও নিরবে নির্বিঘ্নে পারফর্ম করে যাচ্ছেন, তবে সেটা থাকছে আড়ালেই। বলয়ে গেলে মূলত দুই সতীর্থ বোল্ট সাউথির আড়ালেই পড়ছেন তিনি।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য গত দশকে বোল্ট এবং সাউথি থেকেও ওয়াগনারের বোলিং স্ট্রাইক রেট কম। গত ১০ বছরে বোল্ট এবং সাউথি উইকেট প্রতি বল করেছেন যথাক্রমে ৫৬.৪ এবং ৫৭.৯। যেখানে ওয়াগনারের লেগেছে উইকেট প্রতি ৫১.৬ বল।

এমনকি উইকেট প্রতি বোলিং গড়েও বাকী দুইজনের চাইতেও ভালো অবস্থানে আছেন এই পেসার। বোল্টের বোলিং গড় ২৮.০১, সাউথির বোলিং ২৮.৮৩ আর ওয়াগনারের গড় ২৬.৫১। এমনকি অজি গতি তারকা মিচলে স্টার্কের চাইতেও শক্ত অবস্থানে ওয়াগনার। স্টার্কের গড় ২৭.০৮।

প্রায় ৪০ ইনিংস বেশী বল করে উইকেটের হিসেবে এগিয়ে আছেন বোল্ট – সাউথি জুটি। তবে তাদের ম্যাচ সংখ্যা এবং ইনিংস সংখ্যাও বেশী। সমান ৬৫ ম্যাচে বোল্টের বোলিং করা ইনিংস ১২৩ এবং সাউথির ১২২। সেখানে তাদের উইকেট যথাক্রমে ২৫৬ এবং ২৫৫।

যেখানে ওয়াগনারের বোলিং করা ইনিংস মাত্র ৮৬। ৫৫ উইকেট বেশী নিতে বোল্টকে ৩৭ ইনিংস বোলিং বেশী করতে হয়েছে। অন্যদিকে ৩৬ ইনিংস বেশী বল করে সাউথি উইকেট বেশী নিয়েছেন ৫৪ টি। তবে ইনিংস প্রতি উইকেটে হিসেব করলেও বোল্ট – সাউথি – স্টার্কের চাইতে এগিয়ে আছেন তিনি। প্রতি ইনিংসে বোল্টের শিকার করেন গড়ে ২.০৮ উইকেট, সাউথির সেটি ২.০৯, স্টার্কের ক্ষেত্রে ২.২৪ আর ওয়াগনারের ইনিংস প্রতি উইকেট গড় ২.৩৩।

পরিসংখ্যান ওয়াগনারের হয়েই কথা বলে। ২০১০ এর ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত অর্থাৎ পুরো এক দশকে দেশের মাটিতে ১০০ উইকেট শিকারী বোলারের সংখ্যা ১৯ জন। সর্বোচ্চ উইকেটের দিক দিয়ে ১২ নাম্বারে আছেন ওয়াগনার।

পরিসংখ্যানটাকে, যদি তার অভিষেক থেকে আজ পর্যন্ত আনা হয় অর্থাৎ ২৫ জুলাই ২০১২ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত তাহলে এটাই প্রতীয়মান যে ১১ জন বোলার এই সময়টাতে ২০০ টেস্ট উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন৷ এর মাঝে ওয়াগনার একজন। উইকেট ২০১ টি।

এই সময়টাতেও স্ট্রাইক রেটে স্টার্ক থেকে পিছিয়ে থাকলেও দুই সতীর্থ বোল্ট এবং সাউথি থেকে এগিয়ে ওয়াগনার৷ বোল্টের স্ট্রাইক রেট ৫৬.৩, সাউথি ৫৫.৯, ওয়াগনার ৫১.৬৷ বোলিং গড়েও এগিয়ে নেইল। বোল্টের বোলিং গড় ২৭.৮২, সাউথির ২৭.০৭, স্টার্কের ২৬.৮৫ আর নেইল ওয়াগনারের ২৬.৫১।

ম্যাচ এবং ইনিংস সংখ্যা বেশী হওয়ায় উইকেটের হিসেবে এগিয়ে আছেন বোল্ট – সাউথি। ৬২ ম্যাচে ১১৭ ইনিংসে বোল্টের শিকার ২৪৮ উইকেট। অন্যদিকে ৫৪ ম্যাচে ১০২ ইনিংসে সাউথির উইকেট ২২৮। স্টার্কের ক্ষেত্রে ৫২ ম্যাচে ৯৯ ইনিংসে ২৩০ উইকেট। যেখানটায় ওয়াগনার ৪৬ ম্যাচে ৮৬ ইনিংসে নিয়েছেন ২০১ উইকেট।

ওয়াগনারের চাইতে ৪৭ উইকেট বেশী নিতে বোল্টকে ৩১ ইনিংস বেশী বোলিং করতে হয়েছে। অন্যদিকে ১৬ ইনিংস বেশী বল করে সাউথি উইকেট বেশী নিয়েছেন ২৭ টি। আর ১৩ ইনিংস বেশী বল করে ২৯ উইকেট বেশী নিয়েছেন স্টার্ক। এই সময়টায় ইনিংস প্রতি বোল্টের উইকেট ২.১১ টি সাউথির ২.২৫ টি, স্টার্কের ২.৩২ টি যেখানে ওয়াগনারের ২.৩৩ টি। এই পরিসংখ্যানও ওয়াগনারের পক্ষে।

তার অভিষেক অর্থ্যাৎ ২৫ জুলাই, ২০১২ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত কিউইরা টেস্ট খেলেছে ৬৮ টি, ঘরের মাঠে খেলেছে ৩১ টি। এর ৩১ টেস্টের ২৯ টি তে খেলেছেন ওয়াগনার, বোল্ট ২৭ টি এবং সাউথি ২৮ টি।

এই পেস ত্রয়ীর হাত ধরে ১৮ টি তে জয় পায় কিউরা, ১০ টি টেস্ট ড্র৷ দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত এই টেস্ট গুলোতে ওয়াগনার এবং বোল্টের উইকেট সংখ্যা সমান ১৩৫ টি করে এবং সাউথির ১২৯ টি। দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত এসব টেস্টে বোল্টের স্ট্রাইক রেট ৪৯.৪, সাউথির ৫২.৮ এবং ওয়াগনারের ৪৮.০০।

দেশের মাটিতে তার অভিষেক এর দিন থেকে দশকের শেষ দিন পর্যন্ত ১৫ জন বোলার ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। সর্বোচ্চ উইকেটের দিকে দিয়ে তিনি আছেন যৌথভাবে ৮ম স্থানে। এই তালিকার ৩ জনই কিউই পেসার এবং এই ত্রয়ী ছিলেন নিয়মিত একাদশের তিন পেসার। এতেই প্রমাণিত, বড় সব সাফল্য এই ত্রয়ীর হাত ধরেই এসেছে। যা পরবর্তীতে তাদের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ জয়েও ভূমিকা রেখেছিলো।

বাঁহাতি পেসার হিসেবে দ্রুততম ২০০ উইকেটের রেকর্ড তার দখলে। মাত্র ৪৬ টেস্টে ৮৬ ইনিংসে এই রেকর্ড গড়েন তিনি৷ টেস্টে বাঁহাতি বোলার হিসেবে দ্রুততম ২০০ উইকেট রবীন্দ্র জাদেজার ৪৪ টেস্ট।

পরিসংখ্যানকে যদিও আস্ত একটা গাধাই বলা হয়। তবে মাঝে মাঝে পরিসংখ্যান জিতিয়ে দেয় ওয়াগনারদের। ভ্যারিয়েশন, আগ্রাসন, ডোমিনট করার মানসিকতা, উইনিং ক্যাপাবিলিটি, উইকেট টেকিং ক্যাপাবিলিটি কিংবা বডি লাইনে শট আর বাউন্স ছুড়ে ব্যাটসম্যানকে অস্বস্তিতে ফেলা, সব কিছুই আছে তার। দশক জুড়েও সেটাই করে গিয়েছেন এবং এখনো তা করে যাচ্ছেন। এজন্যই অনেকের চোখে তিনি এই দশকের মোস্ট আন্ডাররেটেড পেসার।

Leave a Comment