দীনেশ কার্তিক, বর্তমান ক্রিকেটপাড়ার আলোচনায় থাকা এক অন্যতম নাম। কিভাবে হেরে যাওয়া বাজি নিজের করে নিতে হয়, তাই যেনো সকলকে দেখালেন দীনেশ। তাইতো ৩৮ বছর বয়সে দীনেশ ঠিকই নিজের জায়গা করেছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলে। নিজের জীবনে অনেক সংঘর্ষ করে কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে এখনো সফলতার মুখ দেখছেন দীনেশ। দীনেশের জীবন বিভিন্ন স্টেজে গিয়ে থমকে দাড়ালেও নিজে কখনো থেমে থাকেননি। ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময়ে ধোনীর ছায়া হয়েই ছিলেন দীনেশ।
তবুও, থেমে থাকেননি তিনি। লড়াই করে গেছেন সবসময়। তাইতো, সম্প্রতি আইপিএলে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে ভালো পারফর্মেন্সের সুবাদে আবারো ভারতীয় দলে সুযোগ পেলেন ৩৮ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার।
দীনেশ কার্তিক তিন দশকেই ম্যাচ সেরা
ভারতের হয়ে তিন দশকেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন কার্তিক। ২০০৬ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ান্ডারার্সে তাদের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে। সে ম্যাচে ম্যাচ সেরা হন কার্তিক।
এরপরের দশকে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে তার ৮ বলে ২৯ রানের সে ইনিংসের কথা কারোই ভুলার কথা নয়। সে ম্যাচেও ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন কার্তিক।
সেবার, সবচেয়ে কম বল খেলে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন দিনেশ কার্তিক । আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে (বোলিং না করে) এর আগে সর্বনিম্ন ৮ বল খেলে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ব্র্যাড হজ। ২০১৪ সালে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮ বলে ২১ রান করেছিলেন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান। কার্তিক ৮ বলে করেছেন ২৯। তিনটি ছক্কা মেরেছেন, দুটি চার। ২৬ রান এই ৫ বলেই! এর মধ্যে একটা ডট বলও খেলেছেন!
এরপর, ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি টোয়েন্টি সিরিজের ডু অর ডাই ম্যাচে ফিফটি করে নিজের দলকে জেতান কার্তিক। যার সুবাদে, ম্যাচ সেরা হন তিনি।
ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময়ে ধোনীর ছায়া হয়েই ছিলেন দীনেশ।আগস্ট, ২০০৪ সালে ভারতের হয়ে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয় দিনেশ কার্তিকের। নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যগণ রাহুল দ্রাবিড়কে বিকল্প উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখলে এবং অন্যতম উইকেট-রক্ষক পার্থিব প্যাটেলের বাজে ফর্মই এর প্রধান কারণ। লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত তার অভিষেক ম্যাচ তিনি কেবলমাত্র এক রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন।
দু’টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে ছিলেন, ২০০৭ আর ২০১৯, দলে ফিরেছিলেন ১২ বছর পরে। ২০১৯ সালের সেমিফাইনালে কিউয়িদের কাছে পরাজিত প্রথম একাদশেও ছিলেন। ২০০৭ সালের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় ১৫ জনের দলেও সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়াও, ২০১০ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ভারতীয় দলের সঙ্গে ছিলেন কার্তিক। তবে, কখনোই ভারতীয় দলে নিয়মিত হতে পারনেনি তিনি। তবুও, ঘরোয়া ক্রিকেটে তার রানের ফোয়ারা তাকে জাতীয় দলের দিকে টেনেই আনতো।
শুধু জাতীয় দলেই নয়, আইপিএলেও কোন দলেও স্থিত হতে পারেননি ডিকে। একাধিক দল ঘুরে অবশেষে এবার আরসিবির হয়ে খেলে তিনি। আরসিবির হয়ে ব্য়াট হাতে দারুণ ছন্দে পাওয়া গিয়েছে তাকে।এ মৌসুমে ৩৩০ রান করেছেন ১৮৩.৩৩ স্ট্রাইক রেটে। পার স্ট্রাইকার অফ দ্য সিজনের খেতাব দেওয়া হয়েছে তাকে ও ফের সুযোগ পেয়েছেন ভারতীয় দলে।
২০০৭ সালে দীনেশ কার্তিক ছোট বেলার বন্ধু ও প্রেম নিকিতাকে বিয়ে কেরছিলেন। বিয়ের পর নিকিতা যখন সন্তান সম্ভবা হন, তখন কার্তিক জানতে পারেন যে তারই সতীর্থ ক্রিকেটার মুরলি বিজয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে নিকিতার।
নিকিতা ও মুরলি বিজয়ের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয় আইপিএল ৫ চলাকালীন। তাদের প্রেম প্রকাশ্যে আসার পর কার্তিক ও নিকিতার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তারপরও কার্তিক বিয়ে করেছিলেন স্কোয়াশ প্লেয়ার দীপিকা পাল্লিকলের সঙ্গে।
কিন্তু দীপিকার সঙ্গে কার্তিকের সম্পর্কের গল্পও খুব আকর্ষণীয়। দীপিকা পাল্লিকলের সঙ্গে কার্তিকের আলাপ হয় ২০০৯–১০ সালে। চেন্নাইয়ের একটি জিমে তারা একসঙ্গে জিম করতেন। প্রথমে সেটা না জানলেও, পরে একদিন দুজনের সাক্ষাৎ হয়ে যায়।
জানা যায় দীপিকার সঙ্গে দেখা করার জন্য কার্তিক আগের তুলনায় খুব ঘনঘন ওই জিমে যাতায়াত শুরু করে। দীপিকাকে দেখার করার প্রস্তাব দিলে প্রথমে তা এড়িয়ে যান তিনি। তবে ধীরে ধীরে একে অপরকে পছন্দ করতে শুরু করেন।