ফের জিম্বাবুয়ের দায়িত্বে ডেভ হটন: জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল বর্তমানে খুব কঠিন সময় পাড় করছে। একতো সুনির্দিষ্ট কোনো স্পন্সরশিপ তারা খুঁজে পাচ্ছে না , ওর মধ্যে দলের কিছু অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে হারিয়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বিশ্বে এক ধুকতে থাকা দলে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি, ঘরের মাটিতে নামিবিয়া এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হার জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের এক বেহাল দশার চিত্রই প্রদর্শন করে।
জিম্বাবুয়ের যে সময়টাকে সোনালী সময় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, সেই সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটার ছিলেন ডেভ হটন বা ডেভিড লড হটন David Houghton ]। নিজেদের বর্তমান বাজে অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সেই ডেভ হটনেরই স্মরণাপন্ন হলো জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড। ডেভ হটনকে এমন এক সময়ে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো, যেদিন আফগানিস্তানের কাছে শেষ টি-টোয়েন্টিতেও বাজেভাবে পরাজয় মানতে বাধ্য হলো জিম্বাবুইয়ানরা।
আফগানদের কাছে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে এবং ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও আফগানদের করা ১২৫ রানের জবাবে ৯০ রানে অলআউট হয়েছে স্বাগতিকরা। লালচাঁদ রাজপুতের কাছ থেকে ডেভ হটনের কাঁধে তুলে দেয়া হচ্ছে কোচিংয়ের দায়িত্ব। ভারতীয় লালচাঁদ রাজপুত এখন নতুন করে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী মাসেই জিম্বাবুয়ের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব।
[ ফের জিম্বাবুয়ের দায়িত্বে ডেভ হটন ]
সেই বাছাই পর্বে জিম্বাবুয়ের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ডেভ হটন। গত মার্চেই কোচ হিসেবে নিজের মেয়াদ বৃদ্ধি করে নিয়েছিলেন লালচাঁদ রাজপুত। কিন্তু জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড এখন পুরোপুরি কোচিং স্টাফে পরিবর্তন নিয়ে আসলেন। ডেভ হটন এর আগেও জিম্বাবুয়ের কোচ ছিলেন।
১৯৯৯ বিশ্বকাপেও জিম্বাবুয়ের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার অধীনেই ১৯৯৯ বিশ্বকাপে সুপার সিক্সে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। গ্রুপ পর্বে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় পেয়েছিল ডেভ হটনের দল। এরপর কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ার এবং মিডলসেক্সের কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া সর্বশেষ ঘরোয়া ক্রিকেটে মাউন্টেনিয়ার্সের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
ডেভিড হটন জিম্বাবুয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম চারটি টেস্টে অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। তন্মধ্যে দুইটি ড্র ও দুইটিতে পরাজয়বরণ করে তার দল। এছাড়া, জিম্বাবুয়ের একদিনের দলের ১৭টি ওডিআইয়ে নেতৃত্ব দিয়ে একটিতে জয় পায় জিম্বাবুয়ে দল। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৬৩টি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন ডেভিড হটন।
ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৮৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরে জিম্বাবুয়ে দলের সদস্যরূপে অংশ নেন। ৯ জুন, ১৯৮৩ তারিখে নটিংহামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো খেলতে নামেন। আলী শাহ, গ্র্যান্ট প্যাটারসন, অ্যান্ডি পাইক্রফট, জ্যাক হেরন, ডানকান ফ্লেচার, কেভিন কারেন, ইয়ান বুচার্ট, পিটার রসন, জন ট্রাইকোস ও ভিন্স হগের সাথে একযোগে ওডিআই অভিষেক ঘটে তার।
৫ অক্টোবর, ১৯৯৭ তারিখে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ওডিআইয়ে অংশ নেন তিনি। ১৯৮৭ সালের রিলায়েন্স বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ১৩৭ বলে ১৪২ রান করেছিলেন। গ্রুপ-পর্বে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় তিনি ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন।
তার এ অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলা স্বত্ত্বেও তৎকালীন সহযোগী সদস্য দেশ জিম্বাবুয়ে টেস্টভূক্ত নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র ৩ রানের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। তার এ রানটি সহযোগী সদস্য দেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এসময়ে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে ৮ম উইকেট জুটিতে ইয়ান বুচার্টকে সাথে নিয়ে সর্বোচ্চ ১১৭ রানের নতুন রেকর্ড গড়েন।
১০ অক্টোবর, ১৯৮৭ তারিখে ডেকানের হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের চতুর্থ খেলায় তারা এ রেকর্ড গড়েছিলেন। এভাবেই জিম্বাবুয়ে দল টেস্ট মর্যাদা লাভের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়। জিম্বাবুয়ের পক্ষে দ্রুততম ২৪ ইনিংসে ১,০০০ টেস্ট রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।১৯৯২-৯৩ মৌসুমে ভারত ক্রিকেট দল মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বে জিম্বাবুয়ে সফর করে। এ সফরে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে দল তার অধিনায়কত্বে তাদের ইতিহাসের প্রথম টেস্টে ভারতের মোকাবেলা করে।
১৮ অক্টোবর, ১৯৯২ তারিখে হারারে স্পোর্টস ক্লাবে অনুষ্ঠিত একমাত্র টেস্টটিতে জিম্বাবুয়ে টসে জয়লাভ করে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম ইনিংসে ৪৫৬ রান তুলে তার দল। অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ডেভিড হটন ৩২২ বল মোকাবেলান্তে ১২১ রান তুলেন। ঐ খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল। খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি কোচ ও ধারাভাষ্যকারের দায়িত্ব পালন করছেন। হার্টফোর্ডশায়ারের র্যাডলেট ক্রিকেট ক্লাবের কোচের দায়িত্ব নেন।
এ দায়িত্বে থাকাকালীন তার স্মরণীয় সাফল্য ছিল র্যাডলেট দলকে লন্ডনের সর্ববৃহৎ মর্যাদার অধিকারী ক্রিকেট প্রতিযোগিতারূপে আখ্যায়িত ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড ট্রফিতে দলকে শিরোপা এনে দেয়া। এরপর ২০০৪ থেকে ২০০৭ মৌসুমের মধ্যভাগ পর্যন্ত ডার্বিশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের কোচ হন।পরবর্তীতে ২০১১ মৌসুমের মধ্যভাগে তাকে পুনরায় ডার্বিশায়ারের প্রথম একাদশের ব্যাটিং কোচের দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হয়। জিম্বাবুয়ের দ্রুততম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে ২৪ ইনিংসে ১০০০ টেস্ট রান সংগ্রহ করেন ডেভিড হটন।
অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের পর জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের ইতিহাসে তাকে দ্বিতীয় সেরা ব্যাটসম্যানের মর্যাদা দেয়া হয়। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিনি ২৬৬ রান করেন যা জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অদ্যাবধি সর্বোচ্চ রানরূপে স্বীকৃত। এছাড়াও, সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ১,৪৬৪ রান সংগ্রহ করেছেন কোন শূন্য রান না করেই। ডেভিড হটন ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি নিজ দেশের হকি দলেরও প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পাকিস্তানের হকি দলের অধিনায়ক তাকে সেরা গোলরক্ষকের মর্যাদা দিয়েছিলেন।