রিভার্স সুইং এবং সুইং বোলিংয়ের মধ্যে পার্থক্য

রিভার্স সুইং এবং সুইং বোলিংয়ের মধ্যে পার্থক্য: ক্রিকেটকে বরাবরই ব্যাটারদের গেম বলা হলেও, এ খেলায় একটি দলকে ম্যাচ জেতানোর ক্ষেত্রে বোলারদের অবদান কোনো অংশে কম নয়। তবে, ক্রিকেটে বোলারদের শুধু বল ছুঁড়ে মারলেই হয় না। বরং আয়ত্ত করতে হয় বিভিন্ন বোলিং কৌশল। বোলিং কৌশলের মধ্যে বলকে সুইং করানোর দক্ষতা একটি বোলারকে অন্য বোলারদের থেকে আলাদা করে রাখে। অনেকে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন করে থাকেন রিভার্স সুইং কি?

রিভার্স সুইং এবং সুইং বোলিংয়ের মধ্যে পার্থক্য
কনভেনশনাল সুইং এবং রিভার্স সুইংয়ের মধ্যে পার্থক্য

“রিভার্স সুইং কি” এ বিষয়ে জানতে হলে আগে জানতে হবে সুইং বোলিং কি? মূলত একটি নতুন বলের দুটি অংশ থাকে। একটি হলো সুপার শাইনি পার্ট এবং আরেকটি হলো রাফ পার্ট। এখন একজন বোলার যখন বলটি ব্যাটারের দিকে ছুঁড়ে দেন তখন বাতাস যখন সিমের সংস্পর্শে আসে, তখন বায়ু প্রবাহ দুই দিকে ছড়িয়ে যায়।

[ রিভার্স সুইং এবং সুইং বোলিংয়ের মধ্যে পার্থক্য ]

বলের শাইনি পার্টে যে স্মুথ এয়ার ফ্লো জেনারেট হয় সেটিকে আমরা সেটিকে বলি ল্যামিনার এয়ার ফ্লো। অর্থাৎ, এ জায়গায় কোনো বাধা বা বিঘ্ন আসে না, এ জায়গায় মোটামুটি এক প্রকার ধারাবাহিক এয়ার ফ্লো বা বায়ু প্রবাহ তৈরি হয়।

কিন্তু, বলের রাফ সাইড থেকে যে এয়ার ফ্লো জেনারেট হয় সেটিকে বলে টার্বুলেন্ট এয়ার ফ্লো। অর্থাৎ, এ জায়গায় একটী ইনকসিস্টেন্সি তৈরি হয়। অর্থাৎ, এ জায়গাটা স্মুথ তথা নরম থাকে না।

এখন যে মূল ঘটনাটা ঘটে তা হলো, এই যে বায়ুপ্রবাহ যেখানে স্মুথ এয়ারফ্লো জেনারেট হচ্ছে অর্থাৎ, যে শাইনি পার্ট রয়েছে সে শাইনি পার্টের এয়ার ফ্লো খুব দ্রুত প্রবাহিত হচ্ছে যা খুব তাড়াতাড়ি বলের সার্ফেসটাকে অতিক্রম করে চলে যায়।

কিন্তু, রাফ সাইডের যে এয়ার ফ্লো রয়েছে, সেখানে যে অধারাবাহিকতা রয়েছে তার কারণে শাইনি পার্টের তুলনায় বলের সার্ফেসটা একটু দেড়িতে অতিক্রম করে থাকে।

রিভার্স সুইং এবং সুইং বোলিংয়ের মধ্যে পার্থক্য

যেহেতু, শাইনি পার্টের এয়ার ফ্লো খুব দ্রুত প্রবাহিত হচ্ছে যা খুব তাড়াতাড়ি বলের সার্ফেসটাকে অতিক্রম করে চলে যায় তাই তার বিপরীত সাইডে অর্থাৎ, রাফ সাইডের এক প্রকার গতি এবং বেগ  তৈরি হয়।

এ বেগ এবং গতির কারণে, বলের ডিরেকশন শাইনি পার্টের বিপরীত দিকে চলে যায়। অর্থাৎ, নরমালি যদি একজন ডানহাতি পেস বোলার থাকেন তাহলে ডানহাতি ব্যাটারের বিপক্ষে তিনি আউট সুইং জেনারেট করেন।

কিন্তু, ইন সুইংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সম্পুর্ণ উল্টো। ইন সুইংয়ের ক্ষেত্রে যা ঘটে তা হলো, বলের শাইনি পার্টঁটি থাকে বাম দিকে। অর্থাৎ, বোলার যখন বোলিং করছেন বোলারের বাম দিকে বলের শাইনি পার্ট থাকে এবং যেহেতু শাইনি পার্টে এক প্রকার এয়ার ফ্লো জেনারেট হয় সে কারণে, বায়ু প্রবাহের জন্য খুব দ্রুতই বলটি সার্ফেস অতিক্রম করে চলে যায় তাই তার বিপরীত দিকে একটা বেগ বা গতির সঞ্চার হয় যে কারণে বলটা শাইনি পার্টের বিপরীত পার্টে সুইং করে। অর্থাৎ, আমরা বুঝতে পারছি নরমাল সুইং  বলের ক্ষেত্রে বলের যে শাইনি পার্ট থাকবে তার বিপরীত দিকে বলটি সুইং করবে।

এখন আসা যাক, রিভার্স সুইং প্রসঙ্গ নিয়ে। রিভার্স সুইং হয় মূলত পুরনো বলে অর্থাৎ খুব পুরনো বলে। পুরনো বলেরও দুটি ভাগ থাকে। একটি হচ্ছে সুপার রাফ পার্ট আরেকটি হচ্ছে শাইনি পার্ট কিন্তু, স্লাইট শাইনি পার্ট। এ বলটাকে যখন ব্যাটার বরাবর ছুঁড়ে দেয়া হয়, ঠিক সে সময় বাতাস যখন সীমের সংস্পর্শে আসে তখন দুই দিকেই আবার বায়ু প্রবাহ ছড়িয়ে যায়। এ সময় বলের দুদিকেই টার্বুলেন্ট এয়ার ফ্লো ছড়ায়।

রিভার্স সুইং এবং সুইং বোলিংয়ের মধ্যে পার্থক্য

কিন্তু, বলের যেদিকে সুপার রাফ পার্ট রয়েছে, সে সুপার রাফ পার্টের দিকে থিক টার্বুলেন্স তৈরি হয়। থিক টার্বলেন্স তৈরি হওয়ার ফলে এর বিপরীত দিকে বলটি সুইং করে। অর্থাৎ, শাইনি পার্টের দিকে বলটি সুইং করছে, এ শাইনি পার্টের বিপরীত দিকের বলটি হচ্ছে রিভার্স সুইং।

তুলনা করে বলতে গেলে, নরমাল সুইংয়ের ক্ষেত্রে বলটি শাইনি সাইডের বিপরীত দিকে সুইং করে কিন্তু, রিভার্স সুইংয়ের ক্ষেত্রে বলটি শাইনি সাইডের দিকেই সুইং হচ্ছে।

পাকিস্তানের বোলার ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতার, আব্দুর রাজ্জাক কিংবা আজহার মাহমুদ এরা প্রত্যেকেই রিভার্স সুইং করায় পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, বাংলাদেশের বোলার রুবেল হোসেনও পুরনো বলে রিভার্স করানোর সক্ষমতা রাখেন। বর্তমান যুগ হলো টি টোয়েন্টির যুগ।

সে হিসেবে বর্তমানে বোলাররা বলে বিভিন্ন রকমের বিবর্তন নিয়ে আসছেন। এতো কিছুর পরও টেস্ট ক্রিকেট হচ্ছে সবচেয়ে মর্যাদার লড়াই, আর এ টেস্ট ক্রিকেটে পুরোন বলে রিভার্স সুইং করানো একটি ম্যাচে অংশগ্রহণকারী বোলিং দলের জন্য এক মহাগুরুত্বপূর্ণ অংশ।

 

রিভার্স সুইং এবং সুইং বোলিংয়ের মধ্যে পার্থক্য

 

আরও পড়ুন:

Leave a Comment