মুমিনুল হক [ Mominul Haque ] এক সময়ের বাংলাদেশ দলের অত্যন্ত ধারাবাহিক একজন ব্যাটার। নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে তার ধারাবাহিকতার জন্যই বিশেষরূপে পরিচিত ছিলেন মুমিনুল। বিশেষ করে, টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ব্যাটার যে মুমিনুলই হবেন, এটা অনেকে ক্রিকেটবোদ্ধারই ধারণা ছিলো। তবে, সম্প্রতি সময়ে ব্যাট হাতে খুব বাজে পারফর্মেন্স দেখাচ্ছেন মুমিনুল।
মুমিনুল হকের জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৯১ সমুদ্র উপকূলীয় জেলাশহর কক্সবাজারে। বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম খেলোয়াড় তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে চট্টগ্রাম বিভাগে খেলার পূর্বে ঢাকা বিভাগে খেলেছেন মুমিনুল। পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে সিলেট রয়্যালস দলের হয়ে খেলছেন। টেস্টে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করা প্রথম বাংলাদেশি তিনি।
তিনি বাংলাদেশের জাতীয় টেস্ট দলের বর্তমান অধিনায়ক। বাংলাদেশের বৃহত্তম ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিকেএসপিতে ক্রিকেট বিষয়ে অধ্যয়ন করেন মমিনুল। ২০১১ সালে বিকেএসপি থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। শুরু থেকেই বয়সভিত্তিক ঘরোয়া ক্রিকেটে নির্ভরযোগ্য বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি। ২০০৮-০৯ মৌসুমে ঢাকা বিভাগীয় ক্রিকেট দলের হয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রিকেট দলের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে মমিনুলের।
২০১০ সালে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য হন তিনি। ২০১১ সালে বাংলাদেশ এ ক্রিকেট দলের পক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যান ও প্রথম খেলাতেই দেড়শতাধিক রান সংগ্রহ করেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে বরিশাল বার্নার্স দলের সদস্য হন। খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলসের বিপক্ষ ২৮ বলে অপরাজিত ৫৩ রান সংগ্রহ করে দলকে ৪ উইকেটের ব্যবধানে বিজয়ী হতে সাহায্য করেন।
[ মুমিনুল হক : বাংলার হারিয়ে যাওয়া ব্র্যাডম্যান ]
চারবছর পর ২০১৭ সালের অক্টোবরে সাউথ আফ্রিকা সফর ২০১৭ তে বলার হিসাবে মুমিনুল হক আবার ভালো ধরনের ক্রিকেট খেলে সবার নজড় কাড়তে সক্ষম হন। ৮ মার্চ, ২০১৩ তারিখে শ্রীলঙ্কার গালেতে অনুষ্ঠিত খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে টেস্টে অভিষিক্ত হন তিনি। অভিষেকেই ৫৫ রানের অর্ধ-শতক করেন ও সিরিজে ৫২.০০ রান গড়ে ১৫৬ রান সংগ্রহ করেন।
অক্টোবর, ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ১ম টেস্টে সফরকারী নিউজিল্যান্ড দলের বিরুদ্ধে ৩য় দিনে ২৭৪ বলে ১৮১ রান সংগ্রহ করেন। এ রান করতে গিয়ে তিনি বেশ কিছু মাইলফলক তৈরী করেন –
- দেশের ৩য় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস (পূর্বে – মুশফিকুর রহিম (২০০), মোহাম্মদ আশরাফুল (১৯০)) করার গৌরব অর্জন করেন।
- ইনিংসে সর্বাধিকসংখ্যক ২৭টি বাউন্ডারি বা চারের (পূর্বেকার রেকর্ড: মোহাম্মদ আশরাফুল ২৪টি (অপরাজিত ১৫৮* রান) মার মারেন। ১৫ নভেম্বর, ২০১৪ তারিখে সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩-টেস্ট সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টের চতুর্থ দিন তার চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি দলকে ৪৪৯ রানে এগিয়ে দন।
পূর্বদিনের বিনা উইকেটে ২৩ রান নিয়ে খেলতে নেমে মমিনুল হকের ১৩ বাউন্ডারিতে ১৮৯ বলে অপরাজিত ১৩১* ও তামিমের ৬৫ রানের কল্যাণে বাংলাদেশ ৩১৯/৫ করে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে। মমিনুল বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে ১০০০ টেস্ট রান করেন। এ নিয়ে তিনি তার ১২ টেস্টের ১১ ইনিংসেই পঞ্চাশ বা তদূর্ধ্ব রান সংগ্রহ করেছেন।
এরফলে তিনি এভারটন উইকস, অ্যালেক স্টুয়ার্ট, ম্যাথু হেইডেন, জ্যাক ক্যালিস, সাইমন ক্যাটিচ ও কুমার সাঙ্গাকারা’র দলে প্রবেশ করেন যারা ধারাবাহিকভাবে নয় টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ্ব রান করেছেন। এছাড়াও এভারটন উইকস, সুনীল গাভাস্কার ও মার্ক টেলরের পর চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে তার প্রথম ১২ টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ্ব রান করতে পেরেছেন।
স্যার ডন ব্রাডম্যানের ৯৯.৯৪ গড় রানের পর মমিনুল হক দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ৬৩.০৫ রান গড়ে যারা কমপক্ষে ২০ ইনিংস খেলেছেন। ২৮ এপ্রিল, ২০১৫ তারিখে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ১ম টেস্টের ১ম ইনিংসে অষ্টম অর্ধ-শতক সংগ্রহ করে জুলফিকার বাবরের বলে এলবিডব্লিউ’র শিকারে পরিণত হন।
নিঃসন্দেহে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার তিনি। শুরুতে তো ঈর্ষাজাগানিয়া ব্যাটিং করতেন। একের পর এক সেঞ্চুরি আর হাফ সেঞ্চুরিতে মুমিনুল এতটাই স্বচ্ছন্দ ব্যাটিং শুরু করেছিলেন যে, সবাই বলাবলি করতে লাগলো, বাংলাদেশের ব্র্যাডম্যান তিনি। ১১টি সেঞ্চুরিই মুমিনুলের সে সামর্থ্যের প্রমাণ দেয়। মুমিনুলের অধিনায়কত্বেই মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ঐতিহাসিক টেস্ট জয়লাভ করে বাংলাদেশ।
সেই মুমিনুলের কাঁধে অধিনায়কত্বের ভার আসার পর থেকেই যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। নেতৃত্বের চাপ সামলাতে গিয়ে নিজের সহজাত ব্যাটিংটাই হারিয়ে ফেলেছেন। নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়ার পরও সেই সহজাত ব্যাটিং ফিরে আসেনি তার হাতে।
শেষ ৬ টেস্টের ১১ ইনিংসে মুমিনুলের ব্যাট থেকে দুই অংকের ঘল ছোঁয়া একটি মাত্র ইনিংস বের হয়ে এসেছে। বাকি ১০টিতে দুই অংকের ঘরই ছুঁতে পারেননি তিনি। এর মধ্যে আবার চারটিই শূন্য, রানের খাতাই খুলতে পারেননি। এখন দেখার বিষয় উইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে একাদশে সুযোগ পান কি না মুমিনুল।