মরগ্যানের বেদনাসিক্ত বিদায়

মরগ্যানের বেদনাসিক্ত বিদায়: ইয়ন মরগ্যান, ইংল্যান্ড দলের সফলতম অধিনায়ক। বেশ কিছুদিন ধরেই অফফর্মে ভুগছিলেন ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান। তবে, সম্প্রতি গুঞ্জন উঠেছিলো ইংল্যান্ড দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাড়াতে পারেন তিনি কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারেন ইয়ন মরগ্যান। তবে, আজ অফিশিয়াল ঘোষণা দিলেন ইয়ন মরগ্যান।

মরগ্যানের বেদনাসিক্ত বিদায়
২০০৭ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের হয়ে মরগ্যান

 

জন্মসূত্রে আইরিশ ইয়ন মর্গ্যান ওয়ান ডে খেলেছেন আয়ারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড দু’দলের হয়েই। ২০০৬ সালে আয়ারল্যান্ডের জার্সিতে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। আইরিশদের হয়ে ২৩টি ওয়ান ডে খেলা মর্গ্যান ২০০৯ সালে জার্সি বদলে হয়ে যান ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়।

[ মরগ্যানের বেদনাসিক্ত বিদায় ]

আয়ারল্যান্ডের হয়ে ২০০৭ এবং ইংলিশদের হয়ে ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বর্তমানে ইংল্যান্ডের ওয়ান ডে ও টি-২০ দলের নিয়মিত সদস্য এবং এই দুই ফর্ম্যাটে দলকে নেতৃত্বও দিচ্ছেন অনেকদিন ধরে। এমনকি তার নেতৃত্বেই ইংল্যান্ড ২০১৯ বিশ্বকাপে প্রথমবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপজয়ী হয়েছে।

আয়ারল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যান। ২০০৭ সালের উইন্ডিজ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন তিনি। এর কয়েক বছর পরই আয়ারল্যান্ড দল ছেড়ে ইংল্যান্ড দলে যোগ দেন তিনি। ২০১৮ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন সাবেক এ আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের ১০টি পূর্ণাঙ্গ সদস্যভূক্ত দেশ হিসেবে ইংল্যান্ড অন্যতম, যেখানে আয়ারল্যান্ড দল তৎকালীন সময়ই সহযোগী সদস্য দেশ হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিল। একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সদস্যভূক্ত দেশগুলোই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেস্ট ম্যাচসহ সকল স্তরের ক্রিকেটেই অংশগ্রহণ করতে পারে। মর্গ্যান ইংল্যান্ডের টুয়েন্টি২০ দলের অন্যতম সদস্যরূপে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ২০১০ আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

মরগ্যানের বেদনাসিক্ত বিদায়
২০১০ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মরগ্যান

 

গ্রুপ-পর্বের খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং নিজ মাতৃভূমি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দলের সর্বোচ্চ রান করেন।এছাড়াও, সুপার এইট পর্বে নিউজিল্যান্ডের পক্ষেও তিনি একই ভূমিকা নেন।দলের কার্যকরী বোলিং ও কেভিন পিটারসন এবং ক্রেইগ কাইজওয়েটারের অর্ধ-শতকে সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের প্রান্তে নিয়ে যান।

আয়ারল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ইংল্যান্ডের পক্ষে ফ্রেডরিক ফেনের সেঞ্চুরি করার শতাধিক বছর পর জুলাই, ২০১০ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে ইয়ন মর্গ্যান তার এ রেকর্ডের সাথে যুক্ত হন।

মরগ্যানের বেদনাসিক্ত বিদায়
বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে মরগ্যান

 

বেশ কিছুদিন ধরেই অফফর্মে ভুগছিলেন ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান। তবে, সম্প্রতি গুঞ্জন উঠেছিলো ইংল্যান্ড দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাড়াতে পারেন তিনি কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারেন ইয়ন মরগ্যান। তবে, আজ অফিশিয়াল ঘোষণা দিলেন ইয়ন মরগ্যান।

এক সপ্তাহ আগেও, দলকে বিশ্বকাপের শিরোপা জেতানোর আশার কথা জানিয়েছিলেন মরগ্যান।

ফিটনেসের ওপর নজর দিয়ে চলতি গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডের বেশ কিছু ম্যাচ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখবেন দলের অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান। তবে আগামী অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলকে শিরোপা জেতানোর মতো অবদান রাখার ব্যাপারে তিনি পুরোপুরি আশাবাদী।
গত জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা খেলার ফলে পিঠের ডান দিকে চোটে পড়েন মরগ্যান। পরে টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে কিছু ম্যাচ বাদ দিয়ে দিয়ে খেলার পরেও কুঁচকির ইনজুরিতে পড়েন তিনি। তবু নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের দুটি ম্যাচ খেলেন মরগ্যান। সে দুই ম্যাচেই শূন্য রানে আউট হন মরগ্যান।

মরগ্যানের বেদনাসিক্ত বিদায়

দীর্ঘদিন ধরে ইংল্যান্ডের সাদা বলের অধিনায়কত্ব করলেও, সাম্প্রতিক সময়ে তার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে। কেননা গত ১৮ মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র একবার পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলতে পেরেছেন মরগ্যান। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে সেটিও করতে পারেননি।
তবু নিজের জায়গা ধরে রাখার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন মরগ্যান। তবে এখনই আগামী বছর ভারতের মাটিতে হতে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবছেন না তিনি সেটিও জানিয়েছিলেন। বরং চলতি বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দিকেই বেশি মনোযোগ ৩৫ বছর বয়সী ইংলিশ অধিনায়কের। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘(ওয়ানডে বিশ্বকাপের) এখনও অনেক বাকি।
আমার আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটি শেষ করতে হবে। এটিতে নামার আগে আমি নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত রাখবো। যাতে অবদান রাখতে পারি। ‘আমি কি মাঠ ও মাঠের বাইরে অবদান রাখছি? অধিনায়কত্ব শুরু থেকেই আমি সবার সঙ্গে সত্য বলে আসছি। এই মুহূর্তে আমার মনে হয় আমি অবদান রাখছি এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এখনও বিশ্বকাপ জেতাতে অবদান রাখতে পারবো আমি। এটিই আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে, অবশেষে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ব্যাট হাতে ব্যার্থ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মরগ্যান।
মরগ্যানের হাত ধরেই ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। তবে, এর আগে তিনবার ফাইনালে উঠে অল্পের জন্য চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি তার দল।ইংল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন তিনি এবং সবচেয়ে বেশি রানও করেছেন।

ওয়ানেডেতে খেলেছেন মোট ২৪৮ ম্যাচ। রান করেছেন ৩৯.২৯ গড়ে ৭৭০১। সেঞ্চুরি ১৪টি, হাফ সেঞ্চুরি ৪৭টি। টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ১১৫টি। ২৮.৫৮ গড়ে এবং ১৩৬.১৭ স্ট্রাইকরেটে রান করেছেন ২৪৫৮। সেঞ্চুরি নেই, হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ১৪টি।

 

আরও পড়ুন:

Leave a Comment