ভেরি স্পেশাল লক্ষ্মণ: ভিভিএস লক্ষ্মণ, ভারতীয় ক্রিকেটের এক অন্যতম কিংবদন্তী ব্যাটার। একটা সময় নিজের কনুইয়ের ব্যবহার করে শৈল্পিক ব্যাটিং করে মন জিতেছেন অনেকেরই।
ভিভিএস লক্ষ্মণ যে ভবিষ্যতে ক্রিকেটার হবেন, সে বিষয় নিশ্চিত ছিল না তাঁর তারুণ্যেও। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেট চলছিল অনেক দিন। কিন্তু শেষ অবধি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন মুলতুবি রেখে লক্ষ্মণ চলে আসেন খেলার মাঠে।১৯৯২-৯৩ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফি দিয়ে ভিভিএস লক্ষ্মণের ঘরোয়া ক্রিকেটে যাত্রা শুরু।
প্রথম ইনিংসে শূন্য রান করেন। তার পরের সুযোগগুলোয় অবশ্য আর খালি হাতে ফিরে আসতে হয়নি তাঁকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে দুরন্ত পারফরম্যান্স তাঁর জন্য জাতীয় দলের দরজা খুলে দেয় ১৯৯৬ সালে। সে বছর নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তাঁর টেস্ট অভিষেক।
দীর্ঘ দেড় দশক পেরিয়ে যাওয়া ক্যারিয়ারে ১৩৪ টেস্টে তিনি সংগ্রহ করেছেন মোট ৮৭৮১ রান সর্বোচ্চ ২৮১, গড় ৪৫.৫। অন্য দিকে, ৮৬ টি ওয়ানডেতে তাঁর মোট রান ২৩৩৮। সর্বোচ্চ ১৩১, গড় ৩০.৭৬।
তার খেলা ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেন্স টেস্টের কথা হয়ত সব ক্রিকেট ভক্তেরই মনে আছে।৩ টেস্টের সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুম্বাইয়ে ১০ উইকেটে জয়ী হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় টেস্টে ছিল ইডেনে। প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রান পিছিয়ে থেকে ফলো অন করেছিল ভারত। ম্যাচের চতুর্থ দিনে ইতিহাস লিখেছিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ এবং দ্রাবিড়। তাঁদের দুর্ভেদ্য প্রাচীর ভেদ করে সে দিন ভারতের একটা উইকেটও ফেলতে পারেনি স্টিভ ওয়ার বাহিনী।

লক্ষ্মণ-দ্রাবিড় জুটির ৩৭৬ রানের সুবাদে ফলো অন করা সেই টেস্ট ভারত জিতেছিল ১৭১ রানে। এই ম্যাচেই কেরিয়ারের সর্বোচ্চ ২৮১ রান করেন লক্ষ্মণ। টেস্টে ভারতীয় ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ স্কোরের দিক থেকে তিনি ভেঙে দেন সুনীল গাওস্করের রেকর্ড। ৩ বছর পরে এই রেকর্ড ভেঙেছিলেন বীরেন্দ্র সহবাগ। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই সিরিজ শেষ অবধি ২-১ জিতে নেয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারত।
তাঁর দুর্দান্ত স্ট্রোকপ্লে আর টেল-এন্ডার( আট থেকে এগারো নম্বরে অবস্থানকারী ব্যাটসম্যান) ব্যাটসম্যানদের সাথে বড় ইনিংস খেলার ক্ষমতা এবং অসংখ্য হেরে যাওয়া ম্যাচ জয় করার নজির তাঁকে ক্রিকেট কিংবদন্তিদের মধ্যে একটি অনন্য মর্যাদায় দিয়েছে।
তিনি তাঁর সময়ের সেরা দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, তাঁর অনেকগুলি দুর্দান্ত ক্রীড়াকৌশল প্রদর্শন নথি রয়েছে যেমন ২০০১-এর ইডেন গার্ডেনে তাঁদের বিপক্ষে ২৮১ করা তাঁর রান সর্বকালের সেরা টেস্ট ইনিংস হিসাবে বিবেচিত হয়।
পরবর্তীকালে, তিনি অনেক পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন, যেমন ২০০১ সালে ‘অর্জুন’ পুরস্কার, ২০১১ সালে ‘পদ্মশ্রী’, ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার।
তিনি এমন কয়েকজন খেলোয়াড়ের মধ্যে পড়েন যিনি ক্রিকেট বিশ্বকাপে কখনও না খেলে ১০০ টেস্ট খেলেছেন। উইকেটের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ধীরে দৌড়নো সত্ত্বেও তিনি তাঁর মাস্টার স্ট্রোক খেলার ক্ষমতায় জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার জন্য নিজেকে বারবার প্রমাণ করেছেন। তিনি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে হায়দারবাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটেও ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে খেলেন।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের উদ্বোধনী মরসুমে তিনি ডেকান চার্জার্স দলের অধিনায়কত্ব করেন। পরে তিনি কোচি টাস্কারস দলের হয়ে খেলেছিলেন। তিনি ক্রিকেট কোচিংয়ের সংস্থা ‘আইএমডিআই – আই এম দ্যা আই’ সাথে যুক্ত আছেন।২০০২ সালে, উইজডেনের বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের মধ্যে তিনি একজন ছিলেন। ২০১২ সালে, লক্ষ্মণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন।
২০০১ সালে ‘অর্জুন’ পুরস্কার। ২০০২ সালে, উইজডেনের বর্ষসেরা পুরস্কার। ২০১১ সালে ‘পদ্মশ্রী’, ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। একক ওয়ানডে সিরিজে সর্বাধিক সংখ্যক সেঞ্চুরি (৩) গড়ার কয়েকজন ক্রিকেটারের মধ্যে তিনি রয়েছেন। ২০০১ সালে কলকাতায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৮১ রানের ইনিংসটি উইজডেনের খেলার ইতিহাসে ১০০ টি দুর্দান্ত টেস্ট ইনিংসের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রাখা হয়েছে। একক ওয়ানডে সিরিজে উইকেটকিপারের ছাড়া সবচেয়ে বেশি ক্যাচ (১২) নেওয়ার রেকর্ড তাঁরই রয়েছে, তিনি এই রেকর্ডটি অ্যালান বর্ডারের সাথে ভাগ করেছেন।
তিনি রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে টেস্ট ম্যাচের তৃতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ (৩৬৬ রান) করেন, যা কোনও এক উইকেটের পার্টনারশিপের বিশ্ব রেকর্ড। লক্ষ্মণ একটি টেস্ট ম্যাচের একক অধিবেশনে ১০০ রান সংগ্রহ করা ছয় ভারতীয় টেস্ট খেলোয়াড়ের মধ্যে একজন।
তিনি দ্বিতীয় ভারতীয় খেলোয়াড় যিনি একই মাঠে ১০০০ বা তারও বেশি রান করেছেন। তিনি ইডেন গার্ডেন ১১০.৬৩ গড়ে মোট ১২১৭ রান করেছিলেন। তিনি একমাত্র ভারতীয় খেলোয়াড় যিনি একই মাঠে ১০০ এর বেশি গড়ে ১০০০ রান করেছেন।
একাধিক বার টেস্টের উভয় ইনিংসে অপরাজিত ৫০ করার রেকর্ড মাত্র ৩ জন আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ের মধ্যে তিনি একমাত্র ভারতীয় খেলোয়াড়, অন্যরা শিবনারায়ণ চন্দরপল এবং স্টিভ স্মিথ। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, নিউ দিল্লির টেরি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভূষিত করেছে।

আরও পড়ুন: