বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে পারেননি যেসব তারকা ক্রিকেটারেরা: নিঃসন্দেহে বিশ্বকাপকে ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্ট বলা যায়। কাজেই, প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার। কিন্তু, এমন কিছু ক্রিকেটার আছেন যারা তাদের পারফর্মেন্সের কারণে একজন তারকা ক্রিকেটার হলেও, খেলতে পারেননি নিজ দেশের হয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপ।
Table of Contents
বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে পারেননি যেসব তারকা ক্রিকেটারেরা
জাস্টিন ল্যাঙ্গার (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক কিংবদন্তী ব্যাটার জাস্টিন ল্যাঙ্গার কখনোই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ মাতাতে পারেননি। সবচেয়ে বেশিবারের চ্যাম্পিয়ন দল অস্ট্রেলিয়ায় কখনোই প্রতিভাবান ক্রিকেটারের ঘাটতি ছিল না। বরং কাকে রেখে কাকে একাদশে খেলাবেন একটা সময় এই নিয়েই বিপাকে পড়তেন বিচারকরা। রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বে সেই সোনালী প্রজন্মের অস্ট্রেলিয়া তো ছিল বলতে গেলে অপ্রতিরোধ্য–ই। সেই সোনালী সময়ের তো বটেই, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ওপেনার বিবেচিত হওয়া জাস্টিন ল্যাঙ্গারেরর সৌভাগ্য হয়নি অজিদের হয়ে বিশ্বমঞ্চে খেলার। তবে, অস্ট্রেলিয়ার কোচ হয়ে ঠিকই ২০২১ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জিতেছেন ল্যাঙ্গার।
ভিভিএস লক্ষণ ( ভারত)

ভিভি এস লক্ষণকে এক সময় বলা হতো “Very Very Special Laxman”। এই স্টাইলিশ হায়দ্রাবাদী খেলোয়াড় ভারতের হয়ে খেলেছেন ১৩৪টি টেস্ট। সংগ্রহে রয়েছে ৮,৭৮১ রান। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে অস্ট্রেলিয়ার সাথে সেই মহাকাব্যিক ২৮১ রানের ইনিংস ছাড়াও মনে রাখার মতো অসংখ্য মূহুর্ত উপহার দিয়েছেন লক্ষ্মণ।ভারতের হয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ৮৬টি। ৬টি শতক ও ৩০ গড়ে করেছেন ২,৩৩৮ রান, যেখানে ৬টি শতকের ৪টিই সেই সময়ের পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। কিন্তু শুরু থেকে টেস্ট খেলোয়াড় খেতাব পেয়ে যাওয়ায় বড় টুর্নামেন্টে উপেক্ষিত থেকে গিয়েছেন তিনি। ২০০৩ বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়া মোটামুটি নিশ্চিত থাকার পরও শেষ মূহুর্তে নির্বাচকমণ্ডলীর চমকে বাদ পড়েন লক্ষ্মণ। তার জায়গায় সেবার দলে জায়গা পান দীনেশ মঙ্গিয়া। তাই বিশ্বকাপ মঞ্চে ভারতের হয়ে জার্সি গায়ে চাপানোই হয়ে ওঠেনি এই কিংবদন্তী ব্যাটসম্যানের।
ক্রিস মার্টিন (নিউজিল্যান্ড)

এক সময়ের নিউজিল্যান্ড দলের অন্যতম বোলিং স্তম্ভ ছিলেন ক্রিস মার্টিন। বন্ডের সাথে জুটি বেঁধে নিউজিল্যান্ডের ভরসার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ক্রিস মার্টিন। তবে, তিনিও কখনো নিউজিল্যান্ডের হয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি।কিইউদের হয়ে ৭১ টেস্ট খেলে মার্টিনের উইকেটের সংখ্যা ২৩৩টি। ১৩ বছর ধরে টেস্ট খেললেও অন্যদিকে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সময়কাল মাত্র ৭ বছর। ২০০১ সালে অভিষেকের পর মার্টিনের সর্বশেষ ওডিআই ২০০৮ সালে। কিন্তু নির্মম হলেও সত্য যে, সাত বছরে তিনি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন মোটে ২১ বার।তবে ২০০৭ বিশ্বকাপের সময় ড্যারেল টাফির ইনজুরিতে কপাল খুলেছিল তার। বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নিউজিল্যান্ড দলে জায়গা পান তিনি। কিন্তু পুরো বিশ্বকাপে বেঞ্চ গরম করেই থাকতে হয় ক্রিস মার্টিনকে। মাঠে নামার সুযোগ পাননি একবারও।
স্যার অ্যালিস্টার কুক (ইংল্যান্ড)

একটা সময়ে ভাবা হতো টেন্ডুলকারের টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৮,০০০ হাজার রানের মাইলফলক টপকানোর সাধ্য আছে একমাত্র এলিস্টার কুকেরই। যদিও গত বছরেই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন এই কিংবদন্তী ইংলিশ ওপেনার। তবে যাওয়ার আগে ইংল্যান্ডের হয়ে গড়েছেন টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান করার কীর্তি।
২০০৬ সালে টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর থেকে কুক ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ১৬১টি ম্যাচ। তাতে সংগ্রহ করেছেন ১২,৪৭২ রান, যেটি কি না ইংল্যান্ডের হয়ে সাদা পোশাকে সর্বোচ্চ রানের পাশাপাশি একমাত্র দশ হাজার রানের রেকর্ড। ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কয়েক বছর ধরেই। কুকের হাত ধরে কয়েকটি অ্যাশেজও জয় করেছে ইংলিশ বাহিনী।
তবে দুঃখের বিষয় হলো, এই কিংবদন্তী খেলোয়াড়ের বিশ্বকাপ খেলার সৌভাগ্য হয়নি। একদিনের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৯২ ম্যাচ খেললেও ধারাবাহিকতার অভাবে কখনোই থিতু ছিলেন না মূল দলে। ২০০৬ সালে অভিষেক হওয়ার পর সর্বশেষ ওডিআই ম্যাচ খেলেছিলেন ২০১৪ সালে। তবে একেবারেই ফেলনা ছিল না কুকের পরিসংখ্যান। ৫টি শতকের সাথে ৩৬ এর উপর গড় নিয়ে করেছেন ৩,২০৪ রান। তারপরও ২০০৭ ও ২০১১ দুটি বিশ্বকাপেই উপেক্ষিত থেকে গেছেন নাইটহুড পাওয়া এই ক্রিকেটার। অ্যালিস্টার কুক ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেও এখনো তিনি ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট খেলছেন।
ইরফান পাঠান

এক সময়ের ভারতের তারকা ক্রিকেটার ইরফান পাঠানও কখনো ৫০ ওভারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলেননি।ভারতের হয়ে সব মিলিয়ে ৩০১ টি আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়েছেন ইরফান পাঠান। ওয়ানডে খেলেছেন ১২০টি। এছাড়া ২৯ টেস্ট এবং টি–২০ ম্যাচ খেলেছেন ২৪টি। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে তার দেওয়ার ছিল আরও অনেক। সময়ের আগে ঠিক মতো সুযোগ না পেয়ে কিংবা ইনজুরির কারণে সবটা উজাড় করে দেওয়ার আগেই ফুরিয়ে গেছেন এই পেসার। অনেকে মনে করেন, ইরফানের অলরাউন্ডার হয়ে যাওয়াই ছিল বড় ভুল। নাহলে তার সুইং দিয়ে আরও অনেকদিন ক্রিকেট ভক্তদের মুগ্ধ করতে পারতেন।
আরও পড়ুন: