বাবরের টেকনিক : বর্তমান সময়ে বিশ্বের সেরা ব্যাটারদের মধ্যে অন্যতম একজন হচ্ছেন বাবর আজম। দিনের পর দিন, বাবর নিজের ব্যাটিং অ্যাবিলিটি ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নিজেকে। বর্তমান পাকিস্তান দলের অধিনায়ক বাবর হয়ে উঠেছেন তার দলের এক অন্যতম কান্ডারি। অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ তাকে ভবিষ্যৎ পাকিস্তান ক্রিকেট কিংবদন্তীরূপে আখ্যায়িত করে ফেলেছেন। বাবরের টেকনিক পৃথিবীর অন্য অনেক ব্যাটারদের থেকেই সেরা।

নিজের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে পেস বোলিং ঠিক স্বাচ্ছন্দমতো খেলতে পারতেন না বাবর-আজম। কিন্তু, বর্তমান সময়ে ব্যাটিংয়ে তার সফলতা পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো পেস বোলারদের বিরুদ্ধে তার সফলতা। টেস্ট ক্রিকেটে তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে পেস বোলারদের বিরুদ্ধে ব্যাটিং গড় ছিলো মাত্র ২৩। কিন্তু, পরবর্তীতে পেস বোলারদের বিরুদ্ধে তার ব্যাটিং গড় গিয়ে দাঁড়ায় ৬০.৪৬ এ।
[ বাবরের টেকনিক কেন সেরা? ]
এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো তিনি যখন পেস বল ফেস করেন তখন তিনি বলগুলো যত দেরীতে সম্ভব নেগোশিয়েট করার চেষ্টা করেন। বর্তমান সময়ের পাকিস্তানের আরেক স্টার ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে বাবর-আজমের শটের কানেকটিং পয়েন্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় রিজওয়ানের তুলনায় বাবর পেস বল দেরিতে নিগোশিয়েট করেন।ধীরে ধীরে, পেস বোলিং খেলার ক্ষেত্রে তার কানেকটিং পয়েন্টের উন্নতি ঘটেছে।
বাবর যখন ব্যাটিং করেন তখন ইনিশিয়ালিই তার একটি ট্রিগার মুভমেন্ট থাকে এবং এরপর যখন বোলার বল করার সময় ডেলিভারি স্ট্রাইডে আসেন, ঠিক তখন বাবরের হেড পজিশন একেবারে স্টিল থাকে। ২০১৭ সালে, একটি ট্যুরের সময় বাবরের কানেকটিং পয়েন্ট ছিলো ১.৯৮ সে.মি. এবং পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সেটি ইম্প্রুভড হয়ে দাঁড়ায় ১.৬৭ সে.মি. এ।

সম্প্রতি, পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার রামিজ রাজা , বাবর-আজমের সাথে একটি ব্যাটিং মাস্টারক্লাসে বাবর-আজমের ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। বাবর-আজম যখন তার শট খেলেন, ঠিক ওই সময়ে তিনি খুব বেশী ঝুঁকে পড়েন না। তিনি শট খেলার সময়ে অনেকটা দাঁড়িয়ে হেড পজিশন একদম স্থির রেখে তার সব শটগুলো খেলার চেষ্টা করেন এবং শট খেলার সময় তার কনুই অনেক বেশী হাই থাকে। যে কারণে , বাবরের খেলা কাভার ড্রাইভ গুলো খুব বেশিই সুদর্শন এবং উপভোগ্য।
বাবর-আজম নেট প্র্যাক্টিসের পাশাপাশি , ড্রিলগুলো অধিকতর মনোযোগ দিয়ে করে থাকেন। বাবরের ভাষ্যমতে, তার ফ্রন্ট টো যেদিকে তাক করে থাকে, ঠিক সেদিকেই তিনি শিট খেলে থাকেন। বিশ্বের লেজেন্ডারি ক্রিকেটাররা মূলত অনুশীলনের মাধ্যমেই নিজেদের ব্যাটিংকে উন্নত থেকে উন্নততর করে গেছেন।

সম্প্রতি, দারুণ ফর্মে আছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর-আজম। রীতিমত তার ব্যাটের সূরের বন্দনায় মজেছে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। দিনের পর দিন নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
বাবর আজমের ব্যাট কথা বলছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে বাবর-আজম ৩৯০ রান করেন। তার মধ্যে রয়েছে ১৯৬ রানের ইনিংস। বাবর-আজমের এই দুরন্ত ইনিংসের জন্য দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ ড্র করে পাকিস্তান । টেস্টের পরে ওয়ানডে-তেও পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর-আজম স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তার ফলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল তথা আইসিসি-র বিচারে সর্বকালের সেরা ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে ১৫ নম্বরে পাকিস্তানের এই তারকা।
কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকার গত সপ্তাহে ৮৮৭ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে ছিলেন ১৫ নম্বরে। বাবর আজম ৮৯১ পয়েন্ট পেয়ে চলে আসেন ১৫ নম্বরে। শচিন নেমে গিয়েছেন ১৬ নম্বরে। ৯৩৫ পয়েন্ট পেয়ে ভিভ রিচার্ডস রয়েছেন শীর্ষে। দু’ নম্বরে রয়েছেন পাকিস্তানের জাহির আব্বাস। ৯১১ পয়েন্ট পেয়ে বিরাট কোহলি রয়েছেন ছয় নম্বরে।
তিন ফরম্যাটেই বাবর-আজম পাকিস্তানের অন্যতম ধারাবাহিক পারফরমার। ২০১৯ সালে ২০টি ওয়ানডে ইনিংসে বাবর-আজম করেছেন ১০৯২ রান। পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে মাত্র ৩টি ওয়ানডে-তে ২২১ রান করেন বাবর।
২০২১ সালে ছয়টি ইনিংস থেকে বাবর করেন ৪০৫ রান। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত তিনটি ইনিংস খেলেছেন বাবর। রান করেছেন ২৭৬। যে ফর্মে ব্যাট করছেন বাবর আজম, তাতে পাকিস্তানের ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে করছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে ঝলসে উঠবে তাঁর ব্যাট।
সেঞ্চুরি হাঁকাবেন। রান করবেন। আর তার ফলে আইসিসি-র বিচারে সর্বকালের সেরা ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশে ঢুকে পড়বেন তিনি। প্রথম দশে রয়েছেন পাকিস্তানের দু’ জন। একজন দু’ নম্বরে রয়েছেন। তিনি জাহির আব্বাস। সাত নম্বরে রয়েছেন জাভেদ মিয়াঁদাদ।
এখন দেখার বিষয়, নিজেকে আর কতোদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন বর্তমান সময়ের এক অন্যতম সেরা ব্যাটার।
আরও পড়ুন: