বদলে যাওয়া তাসকিনে মুগ্ধ সবাই। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে তাসকিন আহমেদের অভিষেক হয় ২০১৪ সালে, ঘরের মাটিতে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বশেষ গ্রুপ পর্বের ম্যাচে এবং এটি ছিলো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তখন থেকেই নিজের বোলিংয়ের দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন তাসকিন। মাঝখানে বেশ কয়েক বছর দলের বাহিরেও ছিলেন তাসকিন।
তবে, আবারো পূর্বের তুলনায় অধিক শক্তিশালী হয়ে একের পর এক চমৎকার বোলিং পারফর্মেন্সের মাধ্যমে জয় করে নিচ্ছেন ক্রিকেট বোদ্ধাদের হৃদয়।
তাসকিন তার বোলিংয়ে যেমন বৃদ্ধি করেছেন পেস, ঠিক তেমনি উন্নতি করেছেন বল মুভ করানোর সক্ষমতায়। যার কারণে, দিনের পর দিন ব্যাটারদের জন্য তাসকিন হয়ে উঠেছেন এক আতঙ্কের নাম।
২০১৪ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের অভিষেক টি টোয়েন্টি ম্যাচে নিয়েছিলেন ইনফর্ম ব্যাটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের উইকেট। এরপরই, ভারতের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয় তসকিনের।
ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ওয়ানডেতে তাসকিন
নিজের অভিষেক ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ। ২০১৫ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ দলের এক গুরুত্বপুর্ণ সদস্য ছিলেন তাসকিন আহমেদ। সে বিশ্বকাপে ––ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপুর্ণ ম্যাচে শেষের দিকে সেট ব্যাটার জস বাটলারের উইকেট নিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ।
২০১৫ বিশ্বকাপে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জোস বাটলারের উইকেট নেয়ার পর তাসকিন আহমেদ
২০১৫ বিশ্বকাপের ঘরের মাটিতে ভারত এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়েও বাংলাদেশ দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তাসকিন আহমেদ। ২০১৬ এশিয়া কাপেও বাংলাদেশ দলকে ফাইনালে তোলার নেপথ্যে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন বোলার তাসকিন আহমেদ।
২০১৬ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে তার সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের জন্য কিছু দিনের জন্য তার বোলিংয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয় আইসিসি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হ্যাট্ট্রিকের পর তাসকিন
এরপর, আবারো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেও সেই পুরনো তাসকিন আহমদ যেনো এক প্রকার হারিয়েই গিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে বোলিং অ্যাকশন পরিবর্তন করে উইকেটে নিয়মিত পেলেও বেশ খরুচে বোলিং করছিলেন তাসকিন আহমেদ। এরপর অবশ্য ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডকে হারানো এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হ্যাট্ট্রিক সহ বেশ কিছু স্মরণীয় পারফর্মেন্স দেখিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ।
তবে, কোনো কিছুই পূর্বের তাসকিনকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর আর আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারনেনি তাসকিন। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে অনুষ্ঠিত নিদাহাস ট্রফির পর দীর্ঘদিন রঙিন পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেরও বাহিরে ছিলেন তাসকিন। ইঞ্জুরি সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে ক্রিকেট সার্কিটে নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না তাসকিন।
[ বদলে যাওয়া তাসকিনে মুগ্ধ আইপিএলের দল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস ]
২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তাসকিন বল করছিলেন ১২৫ থেকে ১৩০ কিলোমিটারের মধ্যেই। চোট এবং অনিয়মে গতি হারিয়ে তাসকিন ছিলেন এক প্রকার পথ হারানো ক্লান্ত পথিক । সেখান থেকে নিজেকে বদলে ফেলতে কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প ছিল না। পরের দুই বছর জাতীয় দলের আশপাশে থাকলেও সুযোগ পাচ্ছিলেন না। নিজেও যে খুব বদলে গিয়েছিলেন তাও না।
কিন্তু, দেশে প্রথমদিকে করোনা হানা দেয়ার সময়টায় নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারের পণ করেন তাসকিন। যার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের ফিটনেসসহ নিজের বোলিংয়ে পেস এবং সুইংয়ের এক অসাধারণ বিপ্লব আনেন তিনি। এরপর, ২০২১ সালে উইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের মাধ্যমে ২ বছরেরও অধিক সময় পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রত্যাবর্তন হয় তাসকিনের।
২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তাসকিন
এরপরের নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ওয়ানডে সিরিজেও বাংলাদেশের হতশ্রী পারফর্মেন্সের মধ্যে একমাত্র আশা জাগানিয়া ব্যাপার ছিলো তাসকিনের নিয়ন্ত্রিত ফাস্ট বোলিং। এরপর থেকেই বাংলাদেশ দলের পেস ইউনিটের এক মহাগুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে গেছেন তাসকিন।
তাসকিনের বোলিংয়ে এই অনন্যসাধারণ বিপ্লব এবার চোখে পড়েছে আইপিএলের আসন্ন আসরের নবাগত দল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের। দলটির মেন্টর গৌতম গম্ভীর নিজেই বিসিবির সাথে যোগাযোগ করেছেন, পুরো আইপিএল মৌসুমে তাসকিনকে নিজেদের দলে পাওয়ার জন্য।
এই প্রস্তাবে রাজি থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে চলমান ওয়ানডে সিরিজ শেষেই ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে এই পেসারকে। তবে, কোটি টাকার আসরে খেলার স্বপ্নটা আপাতত পূরণ হচ্ছে না এই পেসারের। তাকে ছাড়পত্র দেবে না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, বিসিবি। সংস্থাটির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জালাল ইউনুস বলেন,
“আপনারা জানেন লখনৌ তাসকিনকে নিতে চেয়েছিল। সেটা বিসিসিআই আমাদের জানিয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের আরও একটা ওয়ানডে এবং দুইটা টেস্ট আছে। আমরা চাই না সে এসব বাদ দিয়ে আইপিএল খেলুক।
জাতীয় দলের দায়বদ্ধতা অবশ্যই এক নম্বর। এর সাথে কোনো কিছুর তুলনা হয় না। সুতরাং আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাকে বলেছি, সিরিজ চালিয়ে যেতে।”
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডের পর দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। সাদা পোশাকের সিরিজকেও সমান গুরুত্বের সাথে দেখার কারণে তাসকিনকে ছাড়বে না দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা। এই সিদ্ধান্তে কোনো ধরনের আপত্তি করেননি তাসকিন।