পঞ্চপান্ডবে ফাটল এবং দেশের ক্রিকেটের অস্থিতিশীল অবস্থা : পঞ্চপান্ডব, নামটি আমাদের মনে এনে দেয় বিশ্ব ক্রিকেট বুক চিতিয়ে লড়াই করে প্রতিপক্ষের বুকে চিড় ধরানো সে রোমাঞ্চকর জয়ের দিনগুলি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে পঞ্চপান্ডবের কথা বলতে গেলেই উঠে আসবে সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ এবং মাশরাফির নাম। বাংলাদেশের ক্রিকেটে পঞ্চপান্ডব তারাই। দেশের ক্রিকেটকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তারাই।
তাদেরই নৈপুণ্যে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ,পাকিস্তান, উইন্ডিজ এবং শ্রীলঙ্কার মতো টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয়লাভ করে। ২০১২,২০১৬, ২০১৮ এশিয়া কাপে তিনবার ফাইনালে উঠা, ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল এবং ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলা, এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে পঞ্চপান্ডবের ক্রিকেটীয় নৈপুণ্যে। এছাড়াও, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট জয়ও এ পঞ্চপান্ডবের নৈপুণ্যেই সম্ভব হয়েছে।
[ পঞ্চপান্ডবে ফাটল এবং দেশের ক্রিকেটের অস্থিতিশীল অবস্থা ]
তবে, দেশের ক্রিকেটকে এতো দূরে নিয়ে আসা পঞ্চপান্ডবে ধরেছে ফাটল ,যার কারণে দেশের ক্রিকেটে এক প্রকার ছন্নছাড়া অবস্থা।
পঞ্চপান্ডবের মধ্যে আন্তর্জাতিক-ক্রিকেট থেকে সর্বপ্রথম অবসান ঘটেছে , বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তজার। ২০১৯ বিশ্বকাপে, বাংলাদেশ দল সেমিফাইনালে না উঠতে পারায়, তিনি নিজেই অধিনায়কত্বের পদ থেকে সরে দাড়ান। আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফি বিন মোর্তজার অধীনেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়লাভ করে যা সংখ্যা ৫০।

২০২০ সালে ঘরের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের মধ্য দিয়েই আন্তর্জাতিক-ক্রিকেটে নিজের অধিনায়কত্বের ইতি ঘটান মাশরাফি বিন মোর্তজা। এরপর, তামিম ইকবাল বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নেন।
মাশরাফি বিন মোর্তজার আন্তর্জাতিক-ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়ার পর মূল সমস্যা দেখা দেয় দলে। তিনি বাংলাদেশ দলের বাহিরে যাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখা দেয়। যার শুরু হয় টেস্ট ক্রিকেট থেকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবসরে যাওয়ার মাধ্যমে। গত বছর, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের বাহিরে অনুষ্ঠিত হওয়া টেস্ট সিরিজেই অবসরের ঘোষোণা জানিয়ে দিয়েছিলেন রিয়াদ। এরপর, আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেন কয়েক মাস পরে।

সে সময় অবসরের ঘোষণা দিয়ে রিয়াদ বলেন, ” দীর্ঘ দিন একটি ফরম্যাটের অংশ হয়ে থাকার পর সেটিকে বিদায় জানানো সহজ নয়। আমি সবসময় ভালো করার চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয়, এখনই টেস্ট ক্যারিয়ারকে বিদায় বলার উপযুক্ত সময়।টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে আসার সময় সমর্থন দেওয়ার জন্য আমি বিবিসি প্রেসিডেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। দলের খেলোয়াড়সহ সাপোর্ট স্টাফ যারা ছিলেন, তাদেরও ধন্যবাদ জানাই। তারা সবসময় আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন, আমার সক্ষমতায় আস্থা রেখেছেন। বাংরাদেশের হয়ে টেস্ট খেলাটা নিঃসন্দেহে একটি গর্বের বিষয়। এই স্মৃতি আমি আজীবন মনে রাখব।”
রিয়াদের পর দেশের ক্রিকেটে আরেক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখা দেয় তামিম ইকবালের ২০২১ টি টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ থেকে হঠাৎই সরে দাড়ানোর কারণে। সে সময় এক ফেসবুক বার্তার মাধ্যমে তামিম টি টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ থেকে সরে দাড়ানোর এ ঘোষণা দেন। তামিম বলেন, “আমার কাছে মনে হয় বেশ কয়েকদিন ধরে খেলছিনা। ইনজুরিটা দ্বিতীয় কারণ, কিন্তু ইনজুরিটা সমস্যা হবে না।” এছাড়া, তামিমের এ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ না খেলার পেছনে রিয়াদের সঙ্গে তার বিবাদের গুঞ্জনতো ক্রিকেটপাড়ায় বহুদিন ধরেই প্রচলিত।

২০২১ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারসহ এক শোচনীয় ক্রিকেটের প্রদর্শন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপের পর ,ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া পাকিস্তান সিরিজেও ইনজুরির কারণে দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারেননি তামিম। তবে, বিপিএলের মাঝামাঝি সময়ে এক প্রেস ব্রিফিং ডেকে টি টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে সাময়িক বিরতির ঘোষণা দেন তামিম।
এ বিষয়ে তামিম বলেন,”গত কিছুদিন আমি বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান, জালাল ইউনুস, কাজী ইনাম আহেমদ আমাকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট চালিয়ে যেতে বলেছেন। তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমি ৬ মাস টি-টোয়েন্টি না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।এ সময়ে আমি ওয়ানডে ও টেস্টে মনোযোগ দেব। যদি ৬ মাস পর দলের আমাকে প্রয়োজন হয়, নির্বাচকরা আমাকে উপযুক্ত মনে করেন এবং আমি ফিট থাকি তাহলে আমি ফিরব।”

এরপর কিছুদিন যেতে না যেতেই কয়েকদিন আগে আন্তর্জাতিক-ক্রিকেট খেলার জন্য আপাতত মানসিকভাবে প্রস্তুত নেই বলে গণমাধ্যমকে জানান, সাকিব আল হাসান। তিনি বলেন, ” মানসিক ও শারীরিক যে অবস্থায় আছি আমার কাছে মনে হয় না আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সম্ভব খুব একটা। এই কারণে আমার মনে হয়, যদি আমি একটা বিরতি পাই, আমি যদি ওই আগ্রহটা ফিরে পাই তাহলে আমার খেলাটা সহজ হবে। কারণ আফগানিস্তান সিরিজে আমার কাছে মনে হয়েছে আমি একজন যাত্রী যেটা হয়ে আমি কখনোই থাকতে চাই না। আমি খেলাটা একদমই উপভোগ করতে পারিনি। পুরো সিরিজটাই, টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে। আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু হয়নি। আমার মনে হয় না এরকম মন মানসিকতা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ খেলাটা ঠিক হবে।”
সব মিলিয়ে দেশের ক্রিকেটে এক হযবরল অবস্থা এখন। কেমন যেনো মাঠের ক্রিকেট থেকে মাঠের বাহিরের ক্রিকেটই এখন আলোচনার প্রধানবস্তু হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এছাড়াও, সব দিক দিয়েই কেমন যেন এক প্রকার ফাটল ধরেছে পঞ্চপান্ডবে। যার কারণে, আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে জয়ের ব্যাপারেও বেশ অধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাংলাদেশ দলের। বাংলাদেশ দল আবারো আন্তর্জাতিক-ক্রিকেটাঙ্গনে জয়ের ধারাবাহিকতায় ফিরবে , এটাই যেনো দেশের কোটি কোটি ক্রিকেট সমর্থকের প্রত্যাশা।
আরও পড়ুন:
- সাইফুদ্দিনের মন্তব্যে আবারো তোলপাড় দেশের ক্রিকেটাঙ্গনেআইপিএল এ দল পেলে কি সাকিব উপভোগ করতেন? – প্রশ্ন পাপনের
- একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের রেকর্ড তালিকা
- ক্রিকেটের নিয়ম – মাঠ, পিচ এবং উইকেট, ব্যাট, বল ইত্যাদির নিয়ম
- মুমিনুল হক : বাংলার হারিয়ে যাওয়া ব্র্যাডম্যান
- দীনেশ কার্তিক তিন দশকেই ম্যাচ সেরা
- ফের জিম্বাবুয়ের দায়িত্বে ডেভ হটন
- শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আদ্যপান্ত