টেস্ট ক্রিকেটের ধারা বদলে দেবে ইংল্যান্ড?

টেস্ট ক্রিকেট, ক্রিকেটের সব সংস্করণের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বলা হয় এটিকেই। এই টেস্ট ক্রিকেটের উপর ভিত্তি করেই, একটি দল শক্তিমত্তার দিক দিয়ে কতটা এগিয়ে তা বিবেচনা করা হয়। তবে, বর্তমানে টেস্ট ক্রিকেট খেলার ধারাই যেনো বদলে দিচ্ছে ইংল্যান্ড। আগ্রসী ক্রিকেটের মাধ্যমে  টেস্ট ক্রিকেটকে আরো জমিয়ে তুলছেন ইংলিশ ক্রিকেটারেরা।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরার সুযোগ পায় নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল। টেস্টের আদি ফরম্যাটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলকে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করল ইংল্যান্ড।  ইংল্যান্ড সফরে লর্ডসে ১ম টেস্টে ৫ উইকেটে হারে কিউইরা। ঘরের শত্রু বিভীষণ হয়ে নিউজিল্যান্ডের সর্বনাশ করলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।

টেস্ট ক্রিকেটের ধারা বদলে দেবে ইংল্যান্ড?

টেস্ট ক্রিকেটের ধারা বদলে দেবে ইংল্যান্ড?

সাবেক কিউই অধিনায়ক ইংল্যান্ডের টেস্ট কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সিরিজেই নিজের দেশ নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলেন। আরও একবার টেস্টকে টি-টোয়েন্টি বানালেন জনি বেয়ারস্টো। টেস্টের ম্যাড়ম্যাড়ে ক্রিকেটকে ভুলিয়ে দেওয়া ইংলিশ এই ব্যাটার এবার দলের জয়ে খেলেছেন ৪৪ বলে ৭১ রানের হার না মানা ইনিংস। ইংল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য ছিল ২৯৬ রানের।
চতুর্থ দিনেই ম্যাচটা প্রায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিল ইংলিশরা। ওলি পোপ আর জো রুটের হাফসেঞ্চুরিতে ২ উইকেটে তুলেছিল ১৮৩ রান। তবে পঞ্চম দিনের উইকেট। একটু তো আশা ছিলই নিউজিল্যান্ডের। সেই আশা যেন আরও বাড়িয়ে দেয় বৃষ্টি। প্রথম সেশনে এক বলও মাঠে গড়ায়নি বৃষ্টির কারণে। লাঞ্চের পর খেলা শুরু হলে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট তুলে নেয় কিউইরা। ১২ বাউন্ডারিতে ৮২ রান করে সাউদির বলে বোল্ড হন ওলি পোপ। তবে ওই উইকেট ফেলে যেন আরও বিপদ বেড়েছে নিউজিল্যান্ডের।
টেস্ট ক্রিকেটের ধারা বদলে দেবে ইংল্যান্ড?
১০ উইকেট নেয়ার পর লিচ

 

ক্রিজে আসেন জনি বেয়ারস্টো। আর এসেই শুরু করেন তার দানবীয় ব্যাটিং। জো রুটকে সঙ্গে নিয়ে ৮৭ বলেই ১১১ রানের জুটি গড়েন বেয়ারস্টো। ফলে ম্যাচটা বের করে নিতে একদমই কষ্ট হয়নি ইংলিশদের। ১২৫ বলে ১১ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ৮৬ রানে অপরাজিত থাকেন রুট। বেয়ারস্টো ৪৪ বলে তার ৭১ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে ৮টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৩টি ছক্কা। এই টেস্টেরই প্রথম ইনিংসে ১৫৭ বলে ১৬২ করেছিলেন বেয়ারস্টো। তার আগের টেস্টে খেলেছিলেন ৯২ বলে ১৩৬ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও চমক দেখায় ইংল্যান্ড। ২৯৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৯৩ রানেই নেই ৪ উইকেট। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রথম টেস্টে জয়ের নায়ক এবং এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরিয়ান জো রুট আউট হয়ে গেছেন মাত্র ৩ রানে। প্রথম ইনিংসের আরেক সেঞ্চুরিয়ান ওলি পোপও আউট মাত্র ১৮ রান করে। ইংল্যান্ডের হাল ধরবেন কে তাহলে? ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদিরা যেভাবে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে বিধ্বংসী রূপ দেখাচ্ছেন, তাতে করে ইংল্যান্ডই উল্টো পরাজয়ের শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল।
কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়তে জানা ইংল্যান্ড, বিশেষ করে অধিনায়ক বেন স্টোকস হাল ছাড়তে রাজি নন। টি-টোয়েন্টির গতিতে সেঞ্চুরি করেছেন জনি বেয়ারেস্টো। ৯২ বলে ১৩৬ রান করে আউট হলেন। অধিনায়ক বেন স্টোকস আউট হননি।
টেস্ট ক্রিকেটের ধারা বদলে দেবে ইংল্যান্ড?
সেঞ্চুরির পর বেয়ারস্টোর উচ্ছ্বাস

 

ওয়ানডে স্টাইলে ৭০ বলে ৭৫ রান করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন তিনি। ২৯৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পঞ্চম দিন চতুর্থ ইনিংসে ঝড়ো গতিতে ব্যাট করে ৫ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছে ইংল্যান্ড। লর্ডসে প্রথম টেস্টেও ৫ উইকেটে জিতেছিল ইংলিশরা।
ট্রেন্টব্রিজেও জিতলো ৫ উইকেটে। সে সঙ্গে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই জিতে নিলো স্বাগতিক ইংলিশরা। নতুন অধিনায়ক বেন স্টোকস আর কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের যাত্রাটা শুরু হলো সিরিজ জয়ের মধ্য দিয়েই। ৭ উইকেটে ২২৪ রান নিয়ে পঞ্চম দিন ব্যাট করতে নেমেছিল নিউজিল্যান্ড।
দিনের প্রথম সেশনে প্রায় সাড়ে ১৫ ওভার ব্যাট করে ২৮৪ রানে অলআউট হয়ে যায় কিউইরা। ইংল্যান্ডের সামনে তাদের লিড দাঁড়ায় ২৯৮ রানের। দিনের খেলা ১৫ ওভারের বেশি শেষ। বাকি আছে আর ৭৪ কিংবা ৭৫ ওভার। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে পঞ্চম দিন এই ৭৫ ওভারে ২৯৯ রান তাড়া করা দুঃস্বপ্নেরও সমান। কারণ, ক্রিজের অবস্থা থাকে খারাপ। ঝুঁকি নিতে গেলে উইকেট পড়ে দ্রুত।
এমন পরিস্থিতিতে মাত্র ৫০ ওভার খেলেই ২৯৯ রান তুলে ফেলেছে ইংল্যান্ড। একেবারে আদর্শ ওয়ানডে ম্যাচে রূপ দিয়েছে তারা। যদিও ঝুঁকি নিতে গিয়ে শুরুতে কিছুটা মূল্য দিতে হয়েছে। শুরুতেই কোনো রান না করে বিদায় নেন জ্যাক ক্রাউলি। অ্যালেক্স লিস ৪৪ রান করলেও ১৮ রানে আউট হন ওলি পোপ। জো রুট বিদায় নেন ৩ রান করে। ৯৩ রানে নেই ৪ উইকেট।
কিন্তু অন্য ধাতুতে গড়া সম্ভবত বেয়ারেস্টো এবং স্টোকস। বোল্ট, সাউদি, ম্যাট হেনরি কিংবা মিচেল ব্রেসওয়েলদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে তারা গড়লেন ১৭৯ রানের অনবদ্য এক জুটি। জনি বেয়ারেস্টো খেলেছেন রীতিমত টি-টোয়েন্টি স্টাইলে। ৭৭ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। ৯টি বাউন্ডারি আর ৫টি ছক্কা মেরে। শেষ পর্যন্ত আউট হন ৯২ বলে ১৩৬ রান করে।
১৪টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছক্কা মারেন ৭টি। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন বেয়ারেস্টো। বেন স্টোকসের ৭০ বলে খেলা ৭৫ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ১০টি বাউন্ডারি আর ৪টি ছক্কায়। ১৫ বলে ১২ রান করে অপরাজিত ছিলেন বেন ফোকস। ৩ উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট। ১টি করে নেন সাউদি আর ম্যাট হেনরি। প্রথম ইনিংসে ৫৫৩ রান করেছিল নিউজিল্যান্ড।
টেস্ট ক্রিকেটের ধারা বদলে দেবে ইংল্যান্ড?
সেঞ্চুরির পর জো রুট
জোড়া সেঞ্চুরি করেন ড্যারিল মিচেল (১৯০) এবং টম ব্লান্ডেল (১০৬)। জবাবে জোড়া সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডও করে ৫৩৯ রান। ১৭৬ রান করেন জো রুট এবং ১৪৫ রান করেন ওলি পোপ। দ্বিতীয় ইনিংসে তিন হাফ সেঞ্চুরির সুবাধে ২৮৪ রান করে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। ফলে ২৯৯ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় ইংল্যান্ডের সামনে। ওভারপ্রতি ৫.৯৮ করে নিয়ে ৫০ ওভারেই জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড।এছাড়া, সিরিজের প্রথম ম্যাচ ৫ উইকেটে জয় পায় স্বাগতিক ইংল্যান্ড।

Leave a Comment