টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সফল কারা?

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সফল কারা?

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির যাত্রা শুরু হয় ২০০৬ সালে। শুরু থেকেই বাংলাদেশ দল খেলছে ক্রিকেটের এই ছোট ফরম্যাট। দলীয় সাফল্য খুব বেশি না এলেও মাঝেমাঝে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ছিল ব্যক্তিগত সাফল্য। তাতেও জয়ের হাসিও হাসা হয়েছে বাংলাদেশ দলের। এবারের লেখায় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সফল যারা, তাঁদের নিয়েই।

বাংলাদেশিদের মধ্য আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। বাংলাদেশের বর্তমান কুঁড়ি ওভার ক্রিকেটের অধিনায়ক রান করছেন ১৭৭১। এই ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে ১০২ ম্যাচ খেলেছেন। ব্যাট হাতে নেমেছেন ৯২ ইনিংস।

পাঁচ ফিফটি রিয়াদের। সাইলেন্ট কিলার নামে খ্যাত এই ব্যাটার আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে ১৩৮ চারের পাশাপাশি হাঁকিয়েছেন ৫৬ ছক্কা। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে ২৪ গড়ের এই ব্যাটসম্যান নট আউট ছিলেন ২১ বার। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস অপরাজিত ৬৪, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশিদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। ২০০৬ সালে অভিষেক, তারপর বাংলাদেশের জার্সিতে আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে খেলেছেন ৮৮ ম্যাচ।

 

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সফল কারা?
ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়ের পর বাংলাদেশ

 

আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে ৮৭ ইনিংস ব্যাট করা সাকিবের রান ১৭৬৩। ২২ গড়ের সাকিবের আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ১২১। নয় ফিফটি সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের।

আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে সাকিব ১৮৩ চারের পাশাপাশি মেরেছেন ৩৫ ছয়। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস অপরাজিত ৮৪, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সাকিব নট আউট ছিলেন ১০ বার।

এই তালিকার তিন নম্বরে দেশ সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে তামিমের রান ১৭০১। ম্যাচ খেলেছেন সাকিব রিয়াদের চেয়ে কম। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তামিমের ব্যাটিং গড় ২৪, ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ১১৭। তামিম ইকবাল আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে ১৮০ চারের পাশপাশি মেরেছেন ৪৪ ছক্কা।

বাংলাদেশ
বাংলাদেশের পঞ্চপাণ্ডব

৭৪ ম্যাচ খেলা এই ওপেনার নট আউট ছিলেন পাঁচ বার। ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে বাংলাদেশীদের মধ্যে একমাত্র সেঞ্চুরি এসেছে তার ব্যাট থেকে। ওমানের বিপক্ষে অপরাজিত ১০৩ রানের ইনিংস খেলেছেন এই মারকুটে ওপেনার। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে রয়েছে সাত ফিফটিও।

ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে বাংলাদেশিদের মধ্য চতুর্থ সর্বোচ্চ রান মুশফিকুত্র রহিমের। মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত এই উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের জার্সিতে ম্যাচ খেলেছেন ৯১টি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার রান ১৩২১। গড় বিশের কম, মাত্র ১৯।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যদিও তার রয়েছে বেশিকিছু ম্যাচ জয়ী ইনিংস। ৮২ ইনিংস ব্যাট করা মুশফিক ১৫ বার ছিলেন নট আউট। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে তার ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ১১৫। ফিফটি করেছেন ৫টি। চার মেরেছেন ১১১, ছয় ৩৩। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে এই উইকেটকিপার ব্যাটারের সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ৭২, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা।

আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে সেরা পাঁচের আরেক নাম সৌম্য সরকার। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে রান ১১০৯। ৬২ ম্যাচ খেলেছেন দেশের জার্সিতে। ১৮ গড় আর ১২২ স্ট্রাইক রেটের সৌম্য সরকার আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে করেছেন পাঁচ ফিফটি। ১০৯ চারের পাশপাশি মেরেছেন ৪৩ ছক্কা। ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস ৬৮ রানের।

বোলারদের মধ্যে সফল সাকিব আল হাসান। ব্যাট আর বল হাতে সব্যসাচী এই অলরাউন্ডার দুই ক্ষেত্রেই রাখেন অবদান। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে সাকিব নিয়েছেন ১০৬ উইকেট। ৮৮ ম্যাচে ২০ গড়ে সাকিব উইকেট নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে সাকিবের ইকোনমি সাতেরও কম। সাকিবের ইকোনমি ৬.৭৩।

প্রতি উইকেট নিতে সাকিবের লেগেছে প্রায় ১৮ বল। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে সাকিব চারবার নিয়েছেন চার উইকেট। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে পাঁচ উইকেট পকেটে পুরেছেন একবার, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ক্রিকেটের এই ছোট ফরম্যাটে বাংলাদেশের বড় বিজ্ঞাপন হয়ে উঠছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ২০১৫ সালে অভিষেক সাতক্ষীরার এই পেসারের। খেলেছেন ৫২ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। মাত্র ১৮ গড়ে ৭৬ উইকেট তুলে বাংলাদেশিদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থান এই বাঁহাতি পেসারের।

আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে ফিজের ইকোনমি ৭.৪৮। পাঁচ মেইডেন নেওয়া এই পেসার চার উইকেট নিয়েছেন দুবার। ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে একবার নিয়েছেন পাঁচ উইকেট, ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ২২ রান খরচায় পাঁচ উইকেট, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড।

বাংলাদেশ
আব্দুর রাজ্জাক

তিন নম্বরে অবস্থান স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের। এই স্পিনার পক্ষে আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি শেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০১৪ সালে। ৪৩ ম্যাচের আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্যারিয়ার। উইকেট তুলেছেন ৪৪টি। চার মেইডেন ওভার করা এই স্পিনারের ইকোনমি প্রায় সাড়ে ছয়। গড়ে ১৯ রান খরচায় নিয়েছেন প্রতিটি উইকেট।

আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে এরপরের অবস্থান বাংলাদেশ দলে ব্রাত্য হয়ে যাওয়া পেসার আল আমিন হোসেন। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পক্ষে খেলেছেন ৩১ ম্যাচ। রাজ্জাকের চেয়ে এক উইকেট কম এই পেসারের। ৭ ইকোনমিতে দিয়েছেন রান।

ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে দারুণ ঈর্ষণীয় বোলিং গড় এই পেসারের। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে আল আমিন হোসেনের বোলিং গড় মাত্র ১৬। যদিও ক্যারিয়ারের নেই কোনো চার উইকেট কিংবা পাঁচ উইকেট। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ২০ রানে তিন উইকেট। ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে নেই কোনো মেইডেন ওভার।

আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সেরা পাঁচ বোলারের পঞ্চম নামটা মাশরাফী বিন মোর্তুজার। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। লম্বা সময় ছিলেন ইনজুরিতে, মিস করেছেন অনে ম্যাচ। তবে ইনজুরিকে পাশ কাটিয়ে মাঠে নেমেছেন, উইকেটও তুলেছেন মাশরাফী।

 

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সফল কারা?

 

২০০৬ সালে অভিষেক এই পেসারের। শেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কায়। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে মাশরাফী বাংলাদেশের পক্ষে খেলছেন ৫৪ ম্যাচ। যার মধ্যে ৫৩ ইনিংস বোলিং করে পকেটে পুরেছেন ৪২ টি উইকেট। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে মাশরাফীর গড় ৩৫।

ক্যারিয়ারে মেইডেন ওভার একটি। ইকোনমি ছিল আটের ওপর। ৪২ উইকেট তোলা মাশরাফী প্রতি উইকেট নিতে বল করেছেন প্রায় ২৭টি। ক্যারিয়ারের একবার নিয়েছেন চার উইকেট। নড়াইল এক্সপ্রেসের ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার ১৯ রান খরচায় চার উইকেট, প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড।

লেখকঃ ইশতিয়াক শাওন, ক্রীড়া গুরুকুল

[ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সফল কারা? ]

আরও পড়ুন:

Leave a Comment