আবারো নারী ক্রিকেটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া

আবারো নারী ক্রিকেটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া : ইংল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলকে হারিয়ে সপ্তমবারের মতো আইসিসি নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুললো অস্ট্রেলিয়া। এ ট্রফি জয়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব থেকে বেশি বিশ্বকাপ জেতার কৃতিত্ব দেখালো অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দল। অস্ট্রেলিয়া পুরুষ ক্রিকেট দল সর্বোচ্চ ৫ বার ওয়ানডে বিশ্বকাপ নেয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছিল। কিন্তু, ২০২২ নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে ছেলেদের থেকে ২ বার বেশি ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতার কৃতিত্ব দেখালো অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দল।

 

আবারো নারী ক্রিকেটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ব্যাটিংয়ে

 

ক্রাইস্টচার্চে টস হেরে ব্যাট করতে নামে অস্ট্রেলিয়া। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন অস্ট্রেলিয়ান দুই ওপেনার।

ওপেনার অ্যালিসা হিলির ব্যাটেই ঝড় উঠেছে বেশি। ১৩৮ বলে ১৭০ রানের বিশাল এক ইনিংস খেলে আউট হন হিলি। জোড়া হাফ সেঞ্চুরি এসেছে আরেক ওপেনার রিচায়েল হাইনেস এবং তিন নম্বরে নামা বেথ মুনির ব্যাট থেকে।

[ আবারো নারী ক্রিকেটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ]

ইংলিশ নারী বোলারদের মধ্যে আনিয়া স্রাবসোল নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। সোপি একলেস্টোন নেন ১ উইকেট। একজন হলেন রানআউট।

 

আবারো নারী ক্রিকেটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার উচ্ছ্বাস

 

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার অ্যালিসা হিলি এবং হাইনেস মিলে গড়েন ১৬০ রানের বিশাল জুটি। এরপর বেথ মুনি এবং অ্যালিসা হিলি মিলে গড়েন ১৫৬ রানের বিশাল জুটি। রিচায়েল হাইনেস আউট হন ৯৩ বলে ৬৮ রান করে। বেথ মুনি ৪৭ বলে করেন ৬২ রান।

বাকিদের মধ্যে এলিসি পেরি অপরাজিত থাকেন ১৭ রানে, ১০ রান করে আউট হন লেগ ম্যানিং এবং তালিয়া ম্যাকগ্রা অপরাজিত থাকেন ৮ রানে।যার ফলে, নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৩৫৬ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া।

বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলতে হলে ইংলিশ মেয়েদের দরকার ছিলো ৫০ ওভার শেষে ৩৫৭ রানের বিশাল লক্ষ্য। তবে, তারা হাল ছাড়েনি।

লিশ ব্যাটাররা কম যায়নি। ২৮৫ রান করে ফেলেছিল তারা। তবে ৪৩.৪ ওভারেই অলআউট হয়ে গিয়েছিল হিদার নাইটরা। যে কারণে হেরে যেতে হলো ৭১ রানে। সে সঙ্গে সপ্তমবারেরমত নারী বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট পরে নিলো অ্যালিসা পেরির অস্ট্রেলিয়া।

এবার ছিল নারী বিশ্বকাপের ১২তম আসর। এর মধ্যে সাতবারই বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। চারবার জিতেছে ইংল্যান্ড এবং বাকি একবার বিশ্বকাপ জিতেছে নিউজিল্যান্ড। এবারই প্রথম নারী বিশ্বকাপে খেলেছে বাংলাদেশ।

জয়ের জন্য ৩৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করলেন ইংলিশ ব্যাটার ন্যাট স্কিভার। ১২১ বলে ১৪৮ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। তবুও তার এই ইনিংস ইংল্যান্ডকে জয় এনে দিতে পারেনি। বাকি ব্যাটারদের যে আর কেউই দাঁড়াতে পারেননি।

ওপেনার ট্যামি বিউমন্ট করেন ২৭ রান। ড্যানি ওয়েট করেন মাত্র ৪ রান। দলের সেরা ব্যাটার এবং অধিনায়ক হিদার নাইট আউট হন মাত্র ২৬ রান করে। অ্যামি জোন্স করেন ২০ রান। সোফি ডাঙ্কলি করেন ২২ রান। চার্লি ডিন করেন ২১ রান। একমাত্র দাঁড়িয়ে ছিলেন ন্যাট স্কিভার। ১২১ বলে ১৫টি বাউন্ডারি এবং ১টি ছক্কার মার মারেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের মধ্যে অ্যালানা কিং, জেস জোনাসেন ৩টি করে উইকেট নেন। মেগান স্কাট নেন ২ উইকেট। তাহলিয়া ম্যাকগ্রা এবং অ্যাসলে গার্ডনার নেন ১টি করে উইকেট।

তবে, এ ফাইনাল খেলার মধ্যেও আরেকটি জিনিস দর্শকদের মনোযোগ কেড়েছে। তা হলো মাঠ ও  মাঠের বাহিরে স্টার্ক এবং হিলি দম্পতির দারুণ রসায়ন।

 

আবারো নারী ক্রিকেটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া
হিলি এবং স্টার্ক দম্পতি

 

ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে আজ যখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনাল খেলতে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া, তখন ভিআইপি বক্সে উপস্থিত ছিলেন স্বামী মিচেল স্টার্কও। মিলিয়ন ডলারের আইপিএলের চেয়ে পরিবার যে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, মিচেল স্টার্ক সেটাই দেখিয়ে দিলেন।

গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে, হাত তালি দিয়ে স্ত্রীর ব্যাটিংকে অভিনন্দিত করেছেন। স্ত্রীও বারবার গ্যালারির দিকে তাকিয়ে স্বামীর উপস্থিতিকে নিজের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছেন।শেষমেশ দুই জনই জিতলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপ।

২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া যে সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিল, সেই বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছিলেন মিচেল স্টার্ক। দুর্দান্ত বোলিং দিয়ে অসিদের পঞ্চমবারেরমত বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন তিনি। সর্বোচ্চ ২২টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

 

আবারো নারী ক্রিকেটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া
ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হাতে এলিসা হিলি

 

অপরদিকে ২০২২ নারী বিশ্বকাপের ম্যান অব দ্য সিরিজ হলেন মিচেল স্টার্কের স্ত্রী অ্যালিসা হিলি। পুরো টুর্নামেন্টে তিনি করেছেন সর্বোচ্চ ৫০৯ রান। তবে একটি ক্ষেত্রে স্বামীকেও ছাড়িয়ে গেলেন স্ত্রী হিলি। তিনি প্লেয়ার অব দ্য সিরিজের সঙ্গে হলেন প্লেয়ার অব দ্য ফাইনালও। কিন্তু স্বামী মিচেল স্টার্ক ম্যান অব দ্য সিরিজ হলেও ম্যান অব দ্য ফাইনাল হতে পারেননি।

১৯৮২ সালে এই ক্রাইস্টচার্চেই নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড।সেবার শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া।  ৪০ বছর পর সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিই ঘটল।

রোববার সেই ক্রাইস্টচার্চে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়ে জিতল অস্ট্রেলিয়া।  ৭১ রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নহয়েছে অসি মেয়েরা।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment