অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের সেঞ্চুরিতে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথমদিন গেলো শ্রীলঙ্কার পক্ষে। এর আগে, নিজের আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ারে মোট ৫ বার নার্ভাস নাইনটিসে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। তবে, এবার ঠিকই নিজের নার্ভকে শক্ত করতে পেরেছেন অ্যাঞ্জেলো। বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করলেন তিনি।

টস জিতে, ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা। এর আগে ম্যাচ শুরুর আগে, সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের স্মরণে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার প্রথম টেস্ট শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়েছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। পাশাপাশি নিজেদের জার্সিতে কালো আর্মব্যান্ড পরে খেলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
[ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের সেঞ্চুরিতে প্রথম দিন শ্রীলঙ্কার ]
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় শ্রীলঙ্কা। দুই ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে আর ওসাদা ফার্নান্ডো বেশ দেখেশুনে শুরু করেন।
শরিফুল ইসলাম আর খালেদ আহমেদের করা প্রথম ৭ ওভার ভালোভাবেই কাটিয়ে দেন তারা। রান ওঠে মাত্র ২২। অষ্টম ওভারে নাইমের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মুমিনুল হক।

নিজের পঞ্চম বলেই উইকেটের দেখা পান নাইম। তরুণ এই অফস্পিনারের কুইকার করুনারত্নের প্যাডে লাগার পর জোড়ালো আবেদন হয়। আম্পায়ার একটু সময় নিলেও পরে আঙুল তুলে দেন। ৯ রানেই ফিরতে হয় লঙ্কান অধিনায়ককে।
ওসাদা ফার্নান্ডো দারুণ খেলছিলেন। উইকেটে অনেকটাই সেট হয়ে গিয়েছিলেন এই ওপেনার। ৩৬ রানে থাকা এই ব্যাটারকে দারুণ এক ডেলিভারিতে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়েছেন নাইম। ফার্নান্ডো ডিফেন্ড করলে তার ব্যাটে আলতো করে ছুঁয়ে যায় বল।
পুরো প্রথম সেশনে একবারের জন্যও বোলিংয়ে আনা হয়নি সাকিব আল হাসানকে। তবে স্লিপে দাঁড়ানোয় খুব সহজেই টিভি ক্যামেরা খুঁজে নিয়েছে তাকে। দ্বিতীয় সেশনেও প্রথম ৪০ মিনিটে সাকিবকে আক্রমণে আনার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অবশেষে ৩৫ ওভার পর আনা হয় সাকিবকে। টানা ১০ ওভার বোলিং করেন তিনি।

দুই ওপেনারকে হারানোর পর দ্বিতীয় সেশনে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন কুশল মেন্ডিস ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। নাইম হাসান, খালেদ আহমেদদের বিপক্ষে তুলনামূলক আক্রমণাত্মক খেলছিলেন তারা। তবে সাকিব আক্রমণে এসেই তাইজুল ইসলামকে সঙ্গে বেঁধে ফেলেন তাদের, রানের জন্য রীতিমতো হাঁসফাঁশ করতে হয়েছে দুই লঙ্কান ব্যাটারকে।
জহুর চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় সেশন শেষে ৫৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান করেছে শ্রীলঙ্কা। এই সেশনে ৩২ ওভার খেলে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮৫ রান করেছে তারা। এরই মধ্যে ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নিয়েছেন মেন্ডিস ও ম্যাথিউস। গত নভেম্বরের পর এবারই প্রথম ফিফটি পেলেন ম্যাথিউস।
প্রথম সেশনে এসেছিল ২৪ ওভারে ৭৩ রান। সেখান থেকে দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ১১ ওভারে ৫৫ রান করে ফেলেন কুশল ও ম্যাথিউজ। তবে সাকিব-তাইজুল আক্রমণে আসতেই থামে রানের গতি। এ দুজন মিলে টানা ২০ ওভার বোলিং করে খরচ করেন মাত্র ২০ রান। তবে সুযোগ তৈরি করলেও মেলেনি সাফল্য।
প্রায় ১৪ মাস পর ফেরা নাইম হাসানের হাত ধরে মাত্র ৬৬ রানের মধ্যেই দুই লঙ্কান ওপেনারকে ফিরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ার আগে অধিনায়ক দিমুথ করুনারাত্নে করেন ৯ রান, আরেক ওপেনার ওশাদা ফার্নান্দোর ব্যাট থেকে আসে ৭৬ বলে ৩৬ রান। এরপর আর বিপদ ঘটতে দেননি কুশল ও ম্যাথিউস।
ইনিংসের ৪৫তম ওভারে ম্যাথিউসকে কট বিহাইন্ড করেছিলেন তাইজুল। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর খানিক সংশয়ের সঙ্গেই ম্যাথিউজ রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত নেন। রিপ্লেতে দেখা যায় বল তার ব্যাটে লাগেনি, ফলে ব্যক্তিগত ৩৮ ও দলীয় ১৩৯ রানের মাথায় জীবন পেয়ে যান এ অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।
অপরপ্রান্তে শুরু থেকেই সাবলীল খেলতে থাকা কুশল কোনো সুযোগই দেননি বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের। নিখুঁত ব্যাটিংয়ে ৫৪ রানে অপরাজিত থাকেন কুশাল এবং ম্যাথিউস।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস আর কুশল মেন্ডিস থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। বড় জুটিতে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছিলেন ক্রমশ, এই যুগলের প্রতিরোধে দ্বিতীয় সেশনে একটি উইকেটও পায়নি বাংলাদেশ।
তবে উইকেট না পেলেও লঙ্কানদের চাপে রেখেছিলেন সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলামরা। সেই ফল অবশেষে পেলো বাংলাদেশ। চা-বিরতির পরই তাইজুল ইসলাম পেলেন উইকেটের দেখা।

তৃতীয় সেশনে সাকিব বল হাতে নিয়েছেন ৯ ওভার পর। এসেই সাফল্য পেয়েছেন। সেশনে নিজের দ্বিতীয় বলেই ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে তুলে নিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
ধনঞ্জয়ার ডিফেন্স ভেদ করে বল লেগে গিয়েছিল ব্যাটে। প্রথম স্লিপ থেকে উইকেটের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন মাহমুদুল হাসান জয়। ৬ রানে থাকা ধনঞ্জয়াকে শুরুতে আউট দেননি আম্পায়ার। পরে রিপ্লেতে আলট্রাএজের অস্তিত্ব পাওয়া গেলে আঙুল তোলেন।
এরপর, আর কোনো উইকেটের পতন ঘটেনি শ্রীলঙ্কার। ৪ উইকেটে ২৩৪ রান নিয়ে দিন শেষ করে শ্রীলঙ্কা।
আরও পড়ুন: